বিবাহ, দাম্পত্য, সন্তান। এই শব্দগুলি একে অপরের পরিপুরক। বাচ্চা হওয়ার মাধ্যমে যেমন একটা সংসার আলোকিত হয়ে ওঠে, তেমনি বাচ্চা না হলে সেই সংসারেই নেমে আসে অন্ধকার তথা অবশ্যম্ভাবী হতাশা।
বিয়ের পর দম্পতির ঘর আলো করে আসবে সন্তান– এমন প্রত্যাশা থাকে বাবা-মাসহ পরিবারের সকল সদস্য তথা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের। তবে সবাই এত সহজে নিজের সন্তানের মুখ দেখতে পারে না। অনেক সময়ই বিয়ের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও ঘরে সন্তান আসে না। এ নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই হতাশায় ভোগেন।
দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়াকে চিকিৎসকদের ভাষাতে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্ব বলে। বর্তমানে এই রোগের বহু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।
এই লেখাটি তাদের জন্য যারা বাচ্চা না হলে করনীয় জানতে চান।
দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও যদি আপনার বচ্চা না হয় তাহলে আপনি IVF Specialist – Dr MD Rafiqul Islam Bhuiyan সাথে যোগাযোগ করতে পারেন
যে ৫ উপায়ে আপনার ঘরেও আসবে ফুটফুটে সন্তানঃ
১। জীবন যাত্রায় পরিবর্তনঃ
প্রকৃত অর্থে আমাদের বর্তমান লাইফস্টাইলই সন্তান না হওয়া বা এর পেছনে বেশি দায়ী। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, সুস্থ পরিবেশে থাকার অভাব, অবাধ যৌনজীবনই বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের মধ্যে একটা খারাপ শুধু নয় অতি খারাপ প্রবনতা আছে তা হলো, দেরি করে ঘুমুতে যাওয়া এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। এই সমস্যাটি শুধু সন্তান ধারনের জন্য নয়, আপনার সুন্দর জীবনেই নানাবিধ প্রভাব ফেলবে। তাই চিকিৎসকদের সর্বপ্রথম পরামর্শ, সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে সুস্থ জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি। নাহলে সংসারে নতুন সদস্য আনার প্ল্যান মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই শ্রেয়।
২। সঠিক চিকিৎসাঃ
পৃথিবীতে এমন কোন সমস্যা নেই যার, চিকিৎসা নেই। ধৈর্য এখানে অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন। একটা দম্পতির মধ্যে শুধু স্বামী, স্ত্রী বা উভয়ের ই সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা আছে মানে সঠিক সমাধান ও আছে। তাই বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে পুরুষের শুক্রানু বৃদ্ধি বা মান বাড়ানো সহ নানাবিধ চিকিৎসা সেবা রয়েছে। নারীর ডিম্বানু, জরায়ুর অন্যান্য ব্যাধি বা ফ্যালোপিয়ান টিউব এ ব্লকেজ এর মতো সমস্যা এখন সুচিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুতই সমাধান সম্ভব। তবে অবশ্যই সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করা জরুরি। ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম ভুইয়া দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সাথে চিকিৎসা করছেন।
৩। সঠিক বয়সেই বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করাঃ
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বা উর্বরতা কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকা ডিম্বাণু ও এর মান কমে ধীরে ধীরে কমে যায়। বয়স বাড়ার সাথে নারীদের দেহে ইউটেরিন ফাইব্রয়েডস, ফেলোপিয়ান টিউবে ব্লক ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও নতুন ভাবে বৃদ্ধি পায়। যে কারণে সন্তান জন্মদানের উর্বরতা কমে যেতে পারে।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাচ্চা না হলে করনীয় নামক গবেষনায় দেখা গেছে, ‘৩০ বছরের পর নারীদের জন্মদান ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ৩৭ বছরের পর তা আরও কমে যায় এবং ৪০ এর পর তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকখানি হ্রাস পায়।‘
হ্রাস পাওয়ার অর্থ গর্ভধারণে বেশি সময় লাগতে পারে অথবা গর্ভধারনের অসামার্থতাও প্রকাশ পেতে পারে।
৪। খাদ্যাভাসে পরিবর্তনঃ
গর্ভধারণ করতে চাইলে খাওয়া-দাওয়ার ব্যপারেও কিছুটা সচেতন হতে হবে। যেমন আপনার খাবারের তালিকায় ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার থাকা অতিব জরুরি। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও দুধ ও এ জাতীয় খাবারও গর্ভধারণে সহায়তা করে। আমি আমার বিভিন্ন লিখায় গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকা নিয়ে বিস্তর লেখার চেষ্টা করেছি। সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকাঃ বাচ্চা হওয়ার জন্য কি কি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে? এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। সেখানে আমি বাচ্চা না হলে বা বাচ্চা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করেছি। তবে একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, সন্তার ধারনের জন্য স্বামী ও তার স্ত্রী উভয়কেই অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
৫। মানসিক ভাবে সুস্থ থাকাঃ
সন্তান না হওয়ার কারণে অনেক দম্পতি ই মানসিক চাপে ভোগেন। খুবই স্বাভাবিক এটা। আবার আমাদের সমাজে পরিবার থেকেও নানান রকম চাপ আসে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের চাপকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো করে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। একটা জিনিস মানতে হবে, জোর করে সন্তান ধারণ করা বা সন্তানের মা হওয়া যায় না। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অবসাদে ভুগলে তা শেষ পর্যন্ত সন্তানের জন্যও মঙ্গলজনক হয় না।
আপনি যদি কিছুদিন চেষ্টার বাচ্চা না হলে যে মন খারাপ বা নিজেকে দায়ী করবেন তার কিন্তু কোনো কারণ নেই। অনেকের ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতে পারে। এটা প্রাকৃতিক একটা বিষয়। আসলে গর্ভধারণ নির্ভর করে নারী, তাঁর জননক্ষমতা, ওভুলেশন বা ডিম্বোস্ফোটনের তারিখ, নারীর সাধারণ স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর। অপরদিকে পুরুষের শুক্রানু, শুক্রানুর মান ও ডিম্বানুর সাথে নিষেক এমন অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে গর্ভধারন।
পরিষেশে বলা যায়, বন্ধ্যাত্ব অন্য আর ৫ টা রোগের মতোই একটা রোগ। এই রোগের সঠিক চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। তবে ধৈর্য নিয়ে পরিশ্রম করলে অবশ্যই বন্ধ্যাত্ব বা এ রোগের প্রতিকার সম্ভব। বাচ্চা না হলে হতাশ হবেন না। প্রকৃতি প্রদত্ব নিয়মেই বাচ্চা হয়। আবার বাচ্চা না হলে সেটাও প্রকৃতি ই নিয়ম। তবে আমাদের উচিৎ সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক নিয়মসমুহ মেনে চলা। ইনশাআল্লাহ্ সফলতা ধরা দিবেই।