DR. MD RAFIQUL
ISLAM BHUIYAN

সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকা

সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকাঃ বাচ্চা হওয়ার জন্য কি কি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে?

সন্তান একটি সংসারে আলোর মতো প্রচুর অর্থ সম্পদ থাকা সত্তেও অনেকে একটি সন্তানের অভাবে হাহাকার করে থাকে সন্তান ব্যাতিত একটি সংসার যে আলো বিহীন অন্ধকার প্রাসাদ সুস্থ্য সন্তান গর্ভে ধারন এবং সন্তানের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য অনেক ধরনের খাদ্যাভাসেই পরিবর্তন আনতে হয় বাচ্চা হওয়ার জন্য কি কি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে? সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ এ নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন

বাচ্চা হওয়ার জন্য যে 12 টি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে? 

কলাঃ

সারা বছরই যে সব ফল পাওয়া যায় কলা তার মধ্যে অন্যতম। কলাতে স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপুর্ন বহু উপাদান নিহীত রয়েছে। কলায় পানি ৭০.১%, আমিষ ১.২%, ফ্যাট (চর্বি) ০.৩%, খনিজ লবণ ০.৮%, আঁশ ০.৪%, শর্করা ৭.২%, ক্যালসিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ৮ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন-সিও রয়েছে কলায়।

ভিটামিন বি ও আয়রন সন্তান ধারনের জন্য গুরুত্বপুর্ন। কলার এসব খাদ্য উপাদান শুক্রানু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং নারীর জরায়ুকে উর্বর করে তোলে।

বাদামঃ

বাদামকে বলা হয় এমন এক খাদ্য যেখানে একের ভেতর অনেক খাদ্য উপাদান অবস্থিত। প্রধানত ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং আরও কিছু মিনারেলস যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন জিংক ও ম্যাঙ্গানিজ, কপার, সেলেনিয়াম আছে বাদামে এসব উপাদান বাচ্চা হওয়ার জন্য খুবই উপকারি।

অলিভ ওয়েলঃ

গর্ভধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরনের মধ্যে অলিভ ওয়েল প্রথম সারিতে। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:

ক্যালোরি: ১১৯ কিলোজুল

স্যাচুরেটেড ফ্যাট: মোট ক্যালোরির ১৪%

মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: মোট ক্যালোরির ৭৩% (বেশিরভাগ ওলিক অ্যাসিড)

পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (PUFA): মোট ক্যালোরির ১১%

ভিটামিন ই: দৈনিক চাহিদার ১৩% (DV)

ভিটামিন কে: দৈনিক চাহিদার ৭%

অলিভ অয়েল এন্টিঅক্সিডেন্টের একটি বিশাল উৎস, যা ইনফ্লামেশন এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকায় অলিভ ওয়েল রাখা গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কেউ যদি সন্তান ধারন করতে চায় তবে ওই দম্পতিকে ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞগন অলিভ অয়েলের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে। অলিভ ওয়েলের খাদ্য উপাদান সমুহ নারীর ডিম্বানুকে নিষেকের ক্ষেত্রে খুবই উপকারি।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল খাবারে ব্যবহার করলে খাবারের গুনগত মান উন্নত হয় এবং শুক্রানু বৃদ্ধি পায়।

আদাঃ

কথায় বলে ‘আদা সকল রোগ নিরাময়ে দাদা’  আদা কোলেস্টেরল, সোডিয়াম পটাশিয়াম ও শর্করার এক সেরা উৎস। সন্তান ধরনের জন্য আদা খাওয়া হয়। আদার পুষ্টিগুন পুরুষের যৌন ক্ষমতাকে বহুগুন বাড়িয়ে তুলে। স্ত্রীর শরীরে হরমনের প্রবাহ বৃদ্ধিতে আদা ভুমিকা রাখে। সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে আদা খুবই উপকারি।

ফল ও সবজিঃ

ফল মূল ও সবজি প্রতিটি মানুষের জন্যই নির্দিষ্ট পরিমানে খাওয়া বাঞ্চনীয়।  সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে ফল ও সবজির কোন বিকল্প নেই। কেউ যদি সন্তান ধারন করতে চায় তবে সেই দম্পতির উচিৎ সবুজ সবজি এবং ফল অধিক পরিমানে খাওয়া। ফল ও শাক সবজির পুষ্টিগুন শরিরে সন্তান ধারনের জন্য প্রয়জোনীয় স্টামিনা বহুগুন বাড়িয়ে তুলে।

মাছঃ

মাছে যথেষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে থাকে ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম ও আয়োডিন। সন্তান ধারন ও নারীর ডিম্বানু নিকেষের প্রয়োজনীয় উপাদান পরিপুর্ন করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় মাছের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে মাছ একই সংগে একাধিক উপাদানের মিশ্রন।

ফলিক এসিডঃ

গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান হলো ফলিক এসিড। ফলিক এসিড হলো এক ধরনের ভিটামিন বি (ভিটামিন বি ৯) হবু মায়েদের গর্ভধারণের ১-২ মাস থেকে গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাস অবশ্যই ফলিক এসিডযুক্ত খাবার বা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খেতে হবে। গর্ভবতী হওয়ার পর তা মায়ের জানতে প্রায় ৪-৫ সপ্তাহ লেগে যায়। আর প্রথম ৪ থেকে ৮ সপ্তাহেই ভ্রূণের প্রাথমিক গঠনের সময় ফলিক এসিড সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়।

কারণ বেশিরভাগ জন্মগত ত্রুটি এই প্রথম কয়েক সপ্তাহেই তৈরি হয়ে থাকে। তাই মায়ের শরীরে যদি আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ না থাকে তাহলে ভ্রূণের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ মেয়েদের সন্তান ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে ও বন্ধ্যাত্বের হার হ্রাস করতে পারে। যখন আপনি সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিখা তৈরি  করবেন তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনাকে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে।

আয়োডিনঃ

গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। আয়োডিনের ঘাটতির ফলে হাইপোথাইরয়েডিজম রোগ হয়। থাইরয়েডের সমস্যা আপনার ঋতুচক্রকে ব্যাহত করতে পারে। মাসিকের সময় বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে, যার ফলে ডিম্বাণু নিঃসরণ, ভ্রূণের ধারণ ও রোপণে কিছু সমস্যা দেখা দেবে। আর এসব অসুবিধা আপনার গর্ভধারণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ফাইবারঃ

যেহেতু গর্ভধারণের পর স্বাভাবিকভাবেই কিছু ওজন বৃদ্ধি পায় তাই গর্ভধারণের আগেই ওজন রাখা উচিত। কারণ অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে তা গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে। ফাইবার আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। ফাইবার রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেও সন্তান ধারণক্ষমতা বাড়ায়।

১০ আয়রনঃ

শরীরে অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আয়রন প্রয়োজন। আয়রনের ঘাটতি হলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। যে মেয়েদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় থাকে, তাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা যাদের আয়রন ঘাটতি আছে তাদের তুলনায় বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে অক্সিজেন কমে গেলে শিশুর শরীরেও অক্সিজেন কম পৌঁছাবে। ফলে শিশুর বৃদ্ধি বিঘ্নিত হওয়া ও সময়ের আগেই বাচ্চা জন্ম নেওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই আয়রন জাতীয় খাবার অবশ্যই আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকায় আয়রন সংবলিত খাবার গ্রহন খুবই গুরুত্বপুর্ন।

ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার।দুধ, দুধের তৈরি খাবার, সয়াবিন, বাদাম, দুধ, ক্যালসিয়াম ফরটিফাইড খাবার ইত্যাদি।

১১ শেলফিশঃ

সামুদ্রিক মাছের মধ্য শেলফিশ ভিটামিন বি টুয়েল্ভ’য়ে ভরপুর। এটা গর্ভধারণের জন্য দরকারী এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর বা গর্ভের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। আর পুরুষের শুক্রাণু উন্নত করে।

১২ কালোজিরাঃ

কালোজিরা সন্তান গর্ভধারণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কালোজিরা বা নাইজেলা সিডে ১৫টি অ্যামোইনো এসিড আছে। এছাড়াও কালোজিরায় ২১ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে ও ৩৮ শতাংশ শর্করা আছে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা এবং গুনাগুন বৃদ্ধি পায়।

পরিশেষে, স্পষ্টতই বলতে হয়, যখন কোন দম্পতি সন্তান গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিবেন তখন থেকেই সন্তান ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকা নিশ্চিত করতে হবে এবং বাচ্চা হওয়ার জন্য কি কি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এ সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে এবং কি কি খাবার থেকে বিরত থাকা চাই তা জানা থাকা আবশ্যক।

যে কোন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্য হওয়া উচিৎ মনে রাখবেন সন্তান একটি পরিবারের জন্য নেয়ামত স্বরুপ তাই সুস্থ্য সন্তান ও সুস্থ্য মা একটি পরিবারের জন্য অতিব গুরুত্বপুর্ন বন্ধন

দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও যদি আপনার বচ্চা না হয় তাহলে আপনি IVF Specialist – Dr MD Rafiqul Islam Bhuiyan সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

আপনার বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলুন