আজ থেকে ২০ বছর আগের কথা চিন্তা করুন। সমাজে যদি কোন নারী বিয়ের ১ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও গর্ভবতী না হতো তবে সমাজ তাবে বন্ধ্যা বলে প্রায়শই তিরস্কার করতো নানাভাবে। এক্ষেত্রে সমস্যাটি নারীর বা পুরুষের হোক না কেন, সমাজে কটুকথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীর সহ্য করতে হতো। উন্নত বিশ্বে এখন বন্ধ্যাত্বকে আর সাধারন অন্যান্য অসুস্থতা বা রোগের মতোই দেখা হয়। তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশেও এখন বন্ধ্যাত্ব নিয়ে মানুষের ভুল ধারনা অনেকাংশেই ভেঙ্গে গেছে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রেখেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি ও সেই সাথে বাংলাদেশেই বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখন বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় সফলতার হার ও ইর্ষণীয়।

বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রের অগ্রগতির ফলে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা এখন অনেক বেশি আধুনিক ও উন্নত। বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন বিশ্বমানের, তেমনি দেশের বিভিন্ন শহরেও এটি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। 

বন্ধ্যাত্ব কী?

বন্ধ্যাত্ব হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে একজন দম্পতি এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে জন্মনিয়ন্ত্রন প্রদ্ধতি গ্রহন ব্যাতিত সন্তান ধারণের চেষ্টা (নিয়মিত সঠিক উপায়ে সহবাস) করার পরও গর্ভধারণে সফল হতে পারেন না। এটি পুরুষ ও মহিলার যেকোনো একটি বা উভয়ের শারীরিক বা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের সমস্যার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, এবং এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে।

বন্ধ্যাত্বের কারণঃ

বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে, যেমনঃ

মহিলাদের ক্ষেত্রেঃ ডিম্বাশয় (Ovarian) সমস্যা, বন্ধ্যাত্বজনিত হরমোনের সমস্যা, জরায়ুর অস্বাভাবিকতা,  অনিয়মিত মাসিক, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), বিভিন্ন যৌন রোগ, অঙ্গের বিকৃতি ইত্যাদি।

পুরুষদের ক্ষেত্রেঃ শুক্রাণুর পরিমান কম থাকা, শুক্রাণুর মান কমে যাওয়া, পুরুষের ডিম্বাণু প্রবাহে বাধার সৃষ্টি,, স্পার্মের গতি কম হওয়া, শারীরিক অঙ্গের বিকৃতি, যৌনস্বাস্থ্যের সমস্যা ইত্যাদি।

এছাড়া মানসিক চাপ, জীবনযাত্রার অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, নানাবিধ পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি কারণেও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার অগ্রগতি

বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা ক্ষেত্র গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি এবং দক্ষ চিকিৎসকরা এখন দেশের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আজকে আলোচনা করা হলো। এসকল আধুনিক প্রদ্ধতি ও সঠিক ভাবে চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

১. ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF)

ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা টেস্ট টিউব বেবি পদ্ধতি হল বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে তথা সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মহিলার ডিম্বাণু এবং পুরুষের শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে একত্রিত করে, গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশে IVF চিকিৎসা অত্যন্ত উন্নত এবং বেশ কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।

২. ইনট্রাউটেরাইন ইনসেমিনেশন (IUI)

ইনট্রাউটেরাইন ইনসেমিনেশন (IUI) হল একটি পদ্ধতি যেখানে উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে পুরুষের শুক্রাণু সরাসরি মহিলার জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এটি IVF এর তুলনায় একটি সহজ এবং কম খরচের পদ্ধতি। যারা IVF করতে চান না বা কিছু নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য IVF সম্ভব নয়, তাদের জন্য IUI একটি অত্যান্ত কার্যকর পদ্ধতি।

৩. ল্যাপারোস্কোপি এবং হিস্টেরোস্কোপি

ল্যাপারোস্কোপি এবং হিস্টেরোস্কো হলো অত্যাধুনিক সার্জারিক্যাল বন্ধ্যাত্ব নির্ণায়ক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে মহিলাদের জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা এবং সার্জারি করা হয়। ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতির মাধ্যমে অন্ত্র, জরায়ু, ডিম্বাশয়সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যা চিহ্নিত করা হয় এবং প্রয়োজনে সার্জারি করা হয়। একইভাবে, হিস্টেরোস্কোপির মাধ্যমে জরায়ুর অভ্যন্তরে কোন সমস্যা থাকলে তা সারিয়ে তোলা হয়।

৪. ডোনার ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ব্যবহার

যদি কোনো দম্পতির নিজের ডিম্বাণু বা শুক্রাণু থেকে গর্ভধারণ সম্ভব না হয়, তবে ডোনার ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ব্যবহার করা যেতে পারে। উন্নত দেশে এই পদ্ধতি এখন খুবই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে কিছুটা কম হলেও এখন দেশে ডোনার থেকে সংগ্রহ করা ডিম্বাণু বা শুক্রাণু দিয়ে গর্ভধারণের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতিও বিভিন্ন বন্ধ্যাত্ব ক্লিনিকে সহজলভ্য।

৫. মাইক্রো সার্জারি (Microsurgery)

যদি পুরুষের শুক্রাণু তৈরি হয় না বা শুক্রাণুর চলাচলে সমস্যা থাকে, তবে মাইক্রো সার্জারি করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র আঙ্গুলের মত যন্ত্র ব্যবহার করে শুক্রাণু বের করা হয়। মাইক্রো সার্জারি পদ্ধতি বর্তমানে বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নত হাসপাতালে করা হয়। এটা মুলত পুরুষের জন্য ব্যবহার করা হয়। ভাল দিক হলো আমাদের দেশে এই পদ্ধতি আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠছে।

৬. হরমোনাল চিকিৎসা

হরমোনাল নানা সমস্যা বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ। হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা, থাইরয়েডের সমস্যার চিকিৎসা হিসেবে হরমোনাল চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা প্রদান করা হয়ে থাকে। সঠিক হরমোন থেরাপি দিয়ে মহিলাদের মাসিক চক্র স্বাভাবিক করা এবং গর্ভধারণের ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা

বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন অটোমেটেড ল্যাব টেস্ট, জিনেটিক টেস্ট, 3D আলট্রাসাউন্ড, সেলফ মনিটরিং ডিভাইস ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রযুক্তিগুলি ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে যথাযথ সঠিকতা প্রদান করে, যার ফলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দ্রুত সমাধান হতে পারে।

বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক নামী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ এর মত জায়গাগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মধ্যে একটা বিরাট অংশ বন্ধ্যাত্ব নিয়ে উচ্চতর গবেষনা করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ডাঃ মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া যিনি অনেক সফলতার সাক্ষী এবং দেশি বিদেশি পুরস্কারে একাধিকবার ভূষিত হয়েছেন।

উপসংহার

বন্ধ্যাত্ব বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা হলেও, বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্র তার উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সাধন করেছে। Iএজন্য হতাশার কিছু নেই। চেষ্টা করে যেতে হবে।  শীঘ্রই আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব সমস্যার সমাধান আরও সহজ হবে। ইনশাআল্লাহ্ সফলতা আসবেই। ধৈর্য ধরুন। সঠিক চিকিৎসা সেবা গ্রহন করুন। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। সকলের জন্য শুভকামনা থাকলো।

নারী বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ: এই ৫টি সংকেত জানলে সচেতন হোন

সেক্স বৃদ্ধির খাবার তালিকা। শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে যেসব খাবারে

সফলতার গল্প

আপনি কি ঢাকার সেরা বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ খুঁজছেন? ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আইভিএফ ও বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ, যার ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ১০০টিরও বেশি সফল আইভিএফ সাফল্য রয়েছে।

গর্ভাবস্থা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের YouTube এবং Facebook পেজে ভিজিট করুন:

সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা পেতে এবং আমাদের কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, এখানে ভিজিট করুন: Google Maps

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *