DR. MD RAFIQUL
ISLAM BHUIYAN

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

মা হওয়া, মা ডাক শোনা! একটি মেয়ের জন্য সবচেয়ে মধুর অর্জন। মা ডাকটি পৃথিবীতে সবচেয়ে মুধুর ধ্বনি। মাতৃত্ব লাভ করার মাধ্যমে একটি মেয়ের ১০ মাসের কষ্ট, ত্যাগ ও পরিশ্রমের সমাপ্তি হয়ে থাকে।

মাতৃত্ব প্রত্যেকটি মেয়ের মধ্যেই অন্যরকম একটি অনুভূতি সৃষ্টি করে। মাতৃত্বেই নারীর পূর্ণতা। সন্তানের মুখ দেখার মাধ্যমে একটি নারী তার গত ১০ মাসের সকল কষ্ট নিমিষেই ভুলে যায়। একজন নারীর জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপুর্ন সময় হচ্ছে গর্ভাবস্থা।

গর্ভাবস্থা নারীর শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে থাকে।  অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শারিরিক ও মানসিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় অত্যান্ত সাবধানতার সাথে চলাফেরা করা যেমন গুরুত্বপুর্ন ঠিক তেমনি কিছু নিয়ম কানুন মেনে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। একজন গর্ভবতী নারী একা একটি দেহ নয়, তার ভেতরেই বেড়ে উঠে একটি নতুন প্রাণ।

গর্ভাবস্থা বা গর্ভধারণ হলো এমন একটি সময় যখন কোনো নারীর শরীরের মধ্যে এক বা একাধিক সন্তানের প্রানের সঞ্চার হয়ে থাকে। এই সময় তার শারীরিক নানা পরিবর্তনের সাথে তার মধ্যেই অনাগত সন্তান বৃদ্ধিলাভ করে থাকে।

প্রাতৃতিক ভাবে সহবাস এবং সংশ্লিষ্ট ক্রিয়ার মাধ্যমে একজন নারী গর্ভধারন করে থাকে। একবার গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একের বেশিও সন্তান থাকতে পারে যেমন যমজ সন্তান। গর্ভাবস্থা এমন এক সময় যখন শারিরিক মিলনেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নানা নিয়ম মানতে হয়। এই সময়ে শরীর এবং মনের বিরাট বিরাট অংশ জুরেই থাকে মা হওয়ার ত্রীব্য আকাঙ্খা।এ অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে অপেক্ষা করতে হয় সন্তানের আগমনের কমপক্ষে পুর্বে প্রায় ১০ মাস সময়।

সাধারনত গর্ভাবস্থায় খ্যাদ্যাভ্যাসে বেশি কিছু পরিবর্তন আনা বানঞ্চনীয়। এসব পরিবর্তন জীবন ধারার সাথে সংশ্লিষ্ট। অনেক সময় অনেক অপছন্দের খাদ্যও দাওয়াই হিসেবে গ্রহন করতে হয়। আবার শুধুমাত্র নিজের ও অনাগত প্রিয়তম সন্তানের  সুস্থতার কথা চিন্তা করে অনেক পছন্দের খাবার ত্যাগ করতে হয়।

 

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না এটি প্রতিটি মায়েরই অবশ্যই জানা থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় শিশু গর্ভে থাকার ফলে গর্ভবতী নারীর খাবারের দিক থেকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। সাধারনত সাক সবজি শরীরের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন ও উপকারি। গর্ভাবস্থায় প্রচুর সাক সবজী খাওয়া স্বাস্থের জন্য বিশেষ দরকারি তবে একটি বিষয় জানা থাকা গুরুত্বপুর্ন যে, সব ধরনের সবজি গর্ভাবস্থায় খেলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে।  গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু সবজি এড়িয়ে চলা উচিত যা উভয়কে নিরাপদ রাখতে পারে।

আজকে আমরা আলোচনা করবো এমনি গুরুত্বপুর্ন টপিক নিয়ে।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না।

১।  করলাঃ 

মানুষের স্বাস্থের জন্য করলা খুব গুরুত্বপুর্ন হলেও, গর্ভাবস্থায় করলা ক্ষতির কারন হতে পারে। করলায় থাকা গ্লাইকোলাইসিস, সেপোনিক, , মারোডিসিন নামক পদার্থ গর্ভবতী মহিলার অনেক ধরনের উপসর্গের সৃষ্টি করে ৷ ক্ষতি হতে পারে গর্ভজাত সন্তানেরও ৷

২। কাচাঁপেপেঃ 

গর্ভাবস্থায় কাঁচা অথবা আধাকাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো। পেপে অন্যান্ন সময় দেহের জন্য পুষ্টিকর সবজি হিসেবে বিবেচিত হলেও গর্ভাবস্থায় তা হতে পারে নানাবিধ সমস্যার কারন। কাঁচা পেঁপেতে উচ্চমাত্রায় ল্যাটেক্স থাকে। আমেরিকান গবেষকদল ইঁদুরের ওপর করা গবেষণা করে দেখেন যে, ল্যাটেক্স জরায়ুর শক্তিশালী পেশি ও গ্রন্ধি সংকোচন করে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কাঁচা পেঁপে খেলে সেটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে। উল্লেখ্য, পাকা পেঁপে খেতে কোনো সমস্যা নেই। পাকা পেঁপে ভিটামিন সি-সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস।

৩। অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিমঃ

রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিম গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য ও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সকল বীজ গর্ভকালীন সময় না খাওয়াই উত্তম।

৪। কাঁচা মূলাঃ

কাঁচা মূলা, এবং রেডি-টু-ইট সালাদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলোতে লিসটেরিয়া, সালমোনিলা ও ই. কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।

৫। সজিনাঃ

সজিনাতে রয়েছে ’আলফা সিটেস্টেরল’ নামক এক ধরনের উপাদান। যা অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতও ঘটাতে পারে। জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি হলেও তাই গর্ভকালীন সময়ে সজিনা না খাওয়াই ভালো।

৬। অ্যালোভেরাঃ

গর্ভকালীন সময়ে অ্যালোভেরা খাওয়া উচিত নয়। অ্যালোভেরার খাদ্য উপাদান সমুহ গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে। আমরা অনেকেই সৌন্দর্যচর্চার জন্য বা পেট পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খেয়ে থাকি। তবে মা ও সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা পরিত্যাগ করা উচিত।

৭। বেগুনঃ

মাছের তরকারি রান্না করেছেন? বেগুন ছাড়া হয়তো ভাবাই যায় না। কিন্তু যাদের শরীর এ এলার্জি রয়েছে বেগুন তাদের প্রত্যাক্ষ শত্রু। শুধু এলার্জি রোগী নয়, গর্ভাবস্থায় ও বেগুন আনেক সময় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। গর্ভবতী নারীরা যদি বেগুন খায় তাহলে ঋতুস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মজাদার সবজি হলেও হাতের নাগালে পাওয়া বেগুনে প্রচুর পরিমানে ফাইটোহরোমনস থাকে, তাই বেগুন এ অবস্থায় ক্ষতিকর। তাছাড়া বেগুন চামড়ার ক্ষতি করে এবং এলার্জির সমস্যা করে, তাই না খাওয়া ভালো।

 

পরিশেষে এ কথা স্পষ্ট যে, গর্ভকালীন সময় অন্য যে কোন সময় থেকে স্পর্শকাতর। এই সময়ে জীবনযাত্রাতে যেমন পরিবর্তন জরুরি তেমনি উপরে উল্লেখিত খাদ্য সবজি গ্রহনেও বিরতি আনা গুরুত্বপুর্ন। আমাদের সকলের কাঙ্খিত সুস্থ মা ও সন্তানের জন্য যে কোন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন। গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য সম্পর্কিত আপনার যে কোন প্রশ্ন বা গুরুত্বপুর্ন মূল্যায়ন থাকলে, আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম বরাবর প্রশ্ন করতে পারেন কমেন্ট বক্সে র মাধ্যমে। চেষ্টা করবো আপনাদের কে, যথাযথ উত্তর দেওয়ার।