গর্ভাবস্থা নারীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। গর্ভাবস্থায় একটি মেয়ের জীবনে সকল দিক থেকেই আসে নানা পরিবর্তন। জীবন যাত্রা, চলনে বলনে বা খাদ্যাভাসে আসে অমুলক পরিবর্তন। অনেকে সহজেই এই অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে পারলেও অনেকে পরেন নানা বিপত্তিতে। এই সময় সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস। গর্ভাবস্থায় সকল খাবারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হলো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ ফলমুল। অনেক ফলের মধ্যে গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত তা জানা থাকলে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে আরো সচেতন হওয়া যায়। অনেক ফলমুল ও খাবারের মধ্যে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় যে ৬ ফল রাখতেই হবে তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত তার একটি তালিকা দেওয়া হলো এবং মিলিয়ে দেখবেন এই ফল গুলি আপনার খাদ্য তালিকায় আছে কিনা? না থাকলে এখনি যোগ করুন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় যে ৬ ফল রাখতেই হবে।
১। কমলাঃ
অত্যান্ত সুস্বাদু পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফল কমলালেবু। আমাদের অতি পরিচিত কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আয়রন শোষণেও সাহায্য করে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য হিসেবেকমলা বিশেষ উপকারি। তাই নিয়মিত কমলা খেলে যে রক্তল্পতার ফাঁদ এড়ানো যাবে, তা তো বলাই বাহুল্য!
ফাইবার আর ফলিক অ্যাসিডের অন্যতম উৎস হলো কমলা। সন্তান জন্মদানে গুরুত্বপুর্ন ভ্রূণের মস্তিষ্ক আর মেরুদণ্ড গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে কমলায়।
শুধু তাই নয়, এই ফল হল ফলিক অ্যাসিডের ভাণ্ডার যা কিনা ভ্রূণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই ফলকে দ্রুত ডায়েটে জায়গা করে দিন। এতে খুব দ্রুতই উপকার পাওয়া যাবে।
কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা মা এবং শিশু উভয়ের ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । এছাড়াও, কমলালেবুতে থাকা ফোলেট ভ্রূণের বিকাশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।এই সমস্ত কারণে, গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়া গর্ভবতী মহিলা এবং শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী ।
২। আপেলঃ
আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি, পটিশিয়ামের ভাণ্ডার। আর এই দুই উপাদান মানুষের দেহে একাধিক জটিল রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই ফলে মজুত রয়েছে পেকটিন নামক একটি উপাদান যা কিনা দেহে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানোতে কাজ করে থাকে। নিয়মিত এই ফল খেলেই গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো নানাবিধ সমস্যার এড়ানো সম্ভব হবে। তাই গর্ভাবস্থায় সুস্থ-সবল জীবন কাটানোর ইচ্ছে থাকলে দিনে অন্তত একটা আপেল খাওয়া উচিৎ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থার সময় আপেল খাওয়া, গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি শিশুর জন্যও খুবই উপকারী । গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় আপেল অনেক রোগ প্রতিরোধ ও স্বাভাবিক বিকাশে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সমস্ত গর্ভবতী মহিলা তাদের গর্ভকালীন সময়ে আপেল খান, তাদের শিশুদের অ্যালার্জি এবং হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে । এছাড়াও আপেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ফাইবার, ফোলেট, পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পেকটিন-এর মতো পুষ্টি উপাদান। এই সমস্ত পুষ্টি গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয় ( তথ্যসূত্র ) ।
প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। চিকিৎসকের কাছে না যেতে হলেও এটি কিন্তু অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। গর্ভাবস্থায় ফলটি খেতে পারেন। এটি গর্ভাবস্থায় খুব নিরাপদ। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় আজ থেকে আপেল রাখতে ভুলবেন না।
৩। কলাঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কলায় মজুত থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ও শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দুরে থাকতে চাইলে রোজ এতটা কলা খাওয়া খুবই গুরুত্বপুর্ন।
গর্ভকালে আপনি প্রতিদিন অন্তত একটি কলা খাবেন। কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। ইলোকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ঠিক রাখে। ফলে স্নায়ু ও মাংসপেশির কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। গর্ভকালে এমনিতেই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সহজেই যেকোনো অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় কলা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন অন্তত একটি কলা খাবেন।
৪। পেয়ারাঃ
দেশি, পুষ্টিকর আর হাতের নাগালে দাম—এমন ফলের তালিকায় সবার প্রথমেই যে নামটি আসে তা পেয়ারা। সারা বছর পাওয়া যায় এমন একটি ফল পেয়ারা। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। বলা হয়, চারটি আপেল বা চারটি কমলার পুষ্টিগুণের প্রায় সমান হয়ে থাকে একটি পেয়ারা। এ ফল গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে ও কার্যকরি।
গর্ভাবস্থায় যে সমস্ত ফল খাওয়া উচিত তার মধ্যে পেয়ারা অন্যতম । পেয়ারা আয়রনের একটি খুব ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থার সময় রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে । এছাড়াও, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে । এমন অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা অতিব উপকারী ফল হিসেবে বেছে নিন ।
৫। কিউইঃ
এ ফলে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’, ফলিক অ্যাসিড,ক্যারোটেনয়েডস, ফাইবার, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। এসব খাদ্য উপাদান হার্টের জন্য ভালো। এ ছাড়া কিউই ফল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রেখে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুকি কমায়।
গর্ভাবস্থায় যে সব ফল খাওয়া উচিত, তার মধ্যে কিউই ফলের নাম অবশ্যই থাকবে । এই ফলে ফোলেট অর্থাৎ ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয় । প্রকৃতপক্ষে, গর্ভাবস্থার সময় ফোলেটের ঘাটতির কারণে শিশুর নিউরাল টিউব রোগ হতে পারে, যেমন মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সমস্যা । গর্ভবতী মায়ের খাদ্য হিসেবে কিউই ফল উপকরি ভুমিকা পালন করে থাকে।
৬। অ্যাভোক্যাডোঃ
সারা পৃথিবীর সকল পুষ্টিবিদ বিজ্ঞানীরা অ্যাভোক্যাডোর গুনাগুন বর্ননা করে থকে। আর এর পিছনে বিস্তর কারণও রয়েছে। যেমন ধরুন- এই ফল হল ভিটামিন কে, ফাইবার, ভিটামিন বি,ম্যাগনেশিয়াম,কোলিন, ভিটামিন সি, এবং পটাশিয়ামের সহ একাধিক উপকারী উপাদানের মুল উৎস। তাই নিয়মিত এই ফল খেলে যে গর্ভবতী নারীর পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবেই, তা তো বলাই বাহুল্য! তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্য এই ফল খেতে পারেন। ঠকবেন না।
ফল এমন একটি খাবার যেখানে মানুষের শরিরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুন বিদ্যমান থাকে।
গর্ভাবস্থায় বা সন্তান ধারনের পুর্বে থেকেই খাদ্য তালিকায় ফল রাখা উচিৎ।
একজন গর্ভবতি মায়ের খাদ্য তালিকায় ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিমিত মাত্রায় ফল খাওয়া একজন মানুষের শারিরিক ও মানষিক বিকাশে অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে।