বর্তমান সময়ে মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে মানুষের দাম্পত্য জীবন জনজীর্ণ! নিউজের হেডলাইনে চোখ রাখলেই আত্নহত্যা সহ ডিভোর্সের ছড়াছড়ি পড়ে যায়।সমসাময়িকে বন্ধ্যাত্বই হয়ে উঠেছে যেন এক অভিশপ্ত রোগের কারসাজি ।কত হাজারো মানুষের সংসার ভেংগে যাচ্ছে,কারো সাজানো সংসার নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি একজন নারী সংসার বা সন্তান লাভের আশা নিয়ে বিয়ে করে। যখন সেই নারী বা পুরুষের মাঝে মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা করার মতো সাহস না থাকে তখন সমস্যা এসে সম্মুখীন হয়। তখন দেখা দেয় কলহ,বিরোধিতা সহ দুশ্চিন্তার মতো কঠিন মানসিক অশান্তি।
বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক যে কোনো পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসক Dr. MD Rafiqul Islam Bhuiyan স্যার এর সাথে
মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্বে থাকা নারীদের মধ্যে ফার্টিলিটি সমস্যা দেখা দেয় আবার কখনো পুরুষের মধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই আপনার পার্টনারের উপর নির্ভর করছে আপনার দাম্পত্য জীবন বা আপনার কাঙ্ক্ষিত সন্তান লাভের তুমুল ইচ্ছা। তাই মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা করা জানা জরুরি।
পূর্বের আর্টিকেলে বিস্তারিত পড়লে ধারনা নিতে পারবেন বন্ধ্যাত্ব কি জন্য হতে পারে,তার জন্য কি কি বিষয়গুলো দায়ী বলে গবেষকরা ধারনা করেছেন।আজ আমরা আলোচনা করবো বন্ধ্যাত্বে থাকা অবস্থায় একজন নারী অথবা পুরুষের মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা কেমন হতে পারে, তার জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখা। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পরিবার ও সমাজের চাপের জন্য প্রভাব পড়ে নতুন অনেক বিবাহিত দম্পতির। জীবনে চলে আসে ক্যান্সার সহ মারাত্মক রোগের মতো মানসিক অশান্তি! তবে বন্ধ্যাত্ব যে একটি রোগ এটা অনেকেই এখনো জানে না।কিছু রোগের যেমন প্রতিকার রয়েছে, আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন ঠিক তেমনি বন্ধ্যাত্ব নিয়ে রিসার্চে বলা হয়েছে- সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনে ফিরতে পারে আপনার নতুন জীবন অথবা সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে।
মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব কি জন্য হতে পারে?
বৈবাহিক সম্পর্ক :
নতুন দম্পতির জীবনে বন্ধ্যাত্বে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন যেন লেগেই থাকে মানসিক অশান্তির জন্য। সবাই সুখে সংসার করার জন্য বিয়ে করে কিন্তু বন্ধ্যাত্ব যেন নিমিষেই শেষ করে দিচ্ছে সংসার, পরিবার ও বন্ধুবাব্ধব।
সবার চাপে পড়ে নিজের সংসারে তখন ঝামেলা হতে শুরু হয়।এভাবে দূরত্ব বেড়ে যায় বিবাহিত দম্পতির মধ্যে এবং এতে বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি লাভের সম্ভাবনা কমে যায়।
সুসাইড প্রবণতা:
মানসিকভাবে ভেংগে পড়ার শেষ পরিনতি হিসাবে অনেকে ডিভোর্স বা সুইসাইড করার চেষ্টা করে থাকেন।এক্ষেত্রে আপনার পার্টনারের উপর প্রভাব পড়বে আপনি বন্ধ্যাত্বে থাকা সময়ে তার সাথে কতখানি সহযোগিতা মনোভাব পেষণ করছেন।তবে অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় মানুষ নিজের সাথে ফাইট করতে করতে ক্লান্ত হয়ে মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়।
বন্ধ্যাত্ব নিয়ে জ্ঞানের অভাব :
বন্ধ্যাত্ব যে একটি রোগ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব থেকে নিজেকে কাটিয়ে তোলা যায় সেটা অনেকে না জানার কারনে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আশ্বাস দিচ্ছে সবাইকে।
তাই সঠিক ধারণা থাকলে সমাজে এরকম হতো না।বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে নারীদের অনেক কটুক্তি শুনতে হয়। চরম হীনমন্যতায় ভুগতে হয় বাংলার নারীসমাজ। আধুনিকতার খাতিরে জ্ঞানের যে পরিসীমা ব্যাপ্ত হয়েছে তা বাংলার অনেক জায়গায় এখনো পৌঁছাতে পারেনি।
সঠিক চিকিৎসার অভাবে:
- আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। কিছু ঔষধ রয়েছে ফার্টিলির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে ফার্টিপিল প্লাস কমপক্ষে তিন মাস গর্ভধারনের আগে খেতে হবে। তাছাড়া ফার্টাইল ২৫ এমজি হলো ইস্ট্রজেন মড্যুলার হিসাবে দেয়া হয়।পাশাপাশি আইভিএফ মেডিকেশন জোজ ৬-৮ সপ্তাহ সময় নিয়ে অনেক সময় প্রেসক্রাইব করা হয়।
- সার্জারি:যখন ঔষধ সেবনের ফলে যদি আপনার অবস্থার উন্নতি না হয়,তখন আপনার সার্জারির কথা বিবেচনা করা লাগবে। ল্যাপারোস্কোপিক হলো ইউটেরিন এর গঠন সমস্যা এবং এন্ড্রোমেট্রিয়াল পলিপস দূর করতে ব্যবহার করা হয়।আইভিএফ – বর্তমান সময়ে আইভিএফ চিকিৎসা বেশি প্রচলিত হয়ে উঠেছে। এই চিকিৎসায় ডিম্বাশয় থেকে ডিম বের করা হয় এবং পরীক্ষা করা হয়।সাধারণত দেড় থেকে দুই লাখের মতো খরচ পড়তে পারে আইভিএফ চিকিৎসায়।
মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা করার উপায়:
সহবাসের মাধ্যমে :
যেহেতু বন্ধ্যাত্ব হওয়ায় সহবাসে ফার্টিলিটির ভালো সম্ভাবনা পাওয়া যায়। তাই যখন মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায় তখন সহবাসে লিপ্ত হলে মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা করা সম্ভব।
খাবার নির্বাচন:
বীজজাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই, তাই সূর্যমুখীর বীজ বা কুমড়ার বীজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া খাবার তালিকায় আরো থাকা লাগবে কলা,মটর,সবুজ সবজি সহ ইনসুলিন কমায় এমন শর্করা জাতীয় খাবার। কারন ইনসুলিন আমাদের শরীরে ফার্টিলিতে বাঁধা সৃষ্টি করে।
পর্যাপ্ত ঘুম:
গবেষকরা বলেছেন সঠিক ঘুমের অভাবে আপনার ফার্টিলির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারন ডিম্ব পরিপক্ব হওয়ার সাথে ঘুমের এক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। দৈনিক অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা তাই ঘুমানোর অভ্যাস থাকা প্রয়োজন।
মেডিটেশনের অভ্যাস:
মেডিটেশন আমাদের মনকে প্রশান্ত করে তুলতে পারে। সাইন্সের ভাষায় আপনার শরীরের ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর করতে হলে সঠিক মেডিটেশনের প্রয়োজন বলে মনে করেন।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরিহার :
ফোন বর্তমানে আমাদের বিনোদনের উৎস তবে কম্পিউটার বা ফোনের থেকে নির্গত আলো থেকে ফার্টিলিতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হয়। তাই চিকিৎসকরা গর্ভধারনের প্রস্তুতি নিলে ইলেকট্রিক ডিভাইস ঘুমানোর আগে পরিমিত ব্যবহারের পরমার্শ দিয়েছেন।
জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করা :
খাদ্যাভ্যাসের স্টাইল বা আপনার চলাফেরা থেকে শুরু করে জিনগত কোন সমস্যা আপনাকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য। তাই নিজেই নিজের সঠিক পরিচর্চা করুন।নিয়মিত ব্যায়াম ও প্রার্থনা করুন। খাবারের তালিকা থেকে প্রসেস্ড ফুড ও সুগার বাদ দিতে হবে ।উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় – মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখা খুবই জরুরি নাহলে আপনি সঠিক চিকিৎসা ও মনোবল ধরে রাখতে অপারগ হবেন। পার্টনার উভয়কে সহযোগিতা মনোভাব ধারন করতে হবে এবং বন্ধ্যাত্ব বিষয়টা গ্রহন করার মনমানসিকতা থাকা লাগবে যাতে পরের অধ্যায়ে সে নতুন জীবনের সূচনা করতে পারে।সর্বোপরি আমাদের দেশ সমাজের চিন্তা বদলাতে হবে। সব পরিবার ও আত্নীয় স্বজনরা কটুক্তি না করে এগিয়ে আসলে ওই সময়ে বন্ধ্যাত্বে থাকা মানুষরা মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে উঠবে,নতুনভাবে বাঁচতে শিখবে।
কথায় আছে – নিজেকে আগে বদলাও দেশ এমনিতেই বদলিয়ে যাবে। তাই আমাদের সবাইকে অবশ্যই সবার পাশে থাকা লাগবে।মানসিকভাবে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা নিয়ে সেমিনার সহ কিছু লিফলেট সব জায়গায় ছড়িতে দিতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে যেন কোন অসহায় নারী জ্ঞানের অভাবে জীবন না হারিয়ে ফেলে।