DR. MD RAFIQUL
ISLAM BHUIYAN

সন্তান না হওয়া

সন্তান না হওয়া ১১টি কারণ ও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন।

সাধারনত বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মেলবন্ধন ঘটে। এর পর এই বন্ধনকে এগিয়ে নিতে সংসারে নতুন অতিথির আগমনের আশা সবাই করে থাকে।

একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সেতুবন্ধ হচ্ছে সন্তান। বিয়ের পর সব দম্পতিই বাবা-মা হতে চান। সন্তান না থাকলে স্বামী-স্ত্রী একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যেমন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তেমনি সামাজিকভাবেও নানা ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। বিভিন্ন ভাবে নানা সময়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয় সন্তান না হওয়ার কারনে।

একটি সন্তান শুধু সামাজিকতা নয়, নিজের শেষ বয়সের ভরসার নাম একটি সন্তান। সেজন্য সুস্থ পারিবারিক বন্ধন মজবুত করার জন্য পরিবারে অবশ্যই সন্তান গুরুত্বপুর্ন।

পরিবারে একজন সন্তান আসুক সেটা সকলেই চায় কিন্তু অনেক সময় এই চাওয়া পুরন হয় না। নানান কারনে সন্তান ধারণে সমস্যা দেখা দেয়। নানা কারণে আমাদের সমাজে  নারী এবং পুরুষ উভয়ই সন্তানধারণ ক্ষমতা হারাচ্ছেন ।

সাধারনত যদি সন্তানপ্রত্যাশী হয়ে কোন দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক বছর একত্রে থেকে নিয়মিত সহবাস বা শারিরীক সম্পর্ক করে থাকেন কিন্তু তারপরও স্ত্রী গর্ভধারণ না করেন তবে তখন তা সন্তান না হওয়া বা বন্ধ্যাত্ব হিসেবে ধরা হয়। বেশিরভাগ সময়, প্রথম এক বছরের মধ্যে আশি ভাগ দম্পতি সন্তান লাভ করে থাকে। দশ ভাগ সন্তান লাভ করে দ্বিতীয় বছরে। বাকি দশ ভাগ কোনোভাবেই সন্তান পায় না। এই দশ ভাগ ই বন্ধ্যাত্ব।

আমরা যদি বন্ধ্যত্বের যথাযথ কারণ খুঁজতে যাই তাহলে প্রথমে দেখতে হবে, সন্তান জন্মের পক্রিয়া। একটি মেয়ে শিশুর জন্মের পর পরই তার শরীরে ডিম্বাণুর পরিমাণ থাকে এক থেকে দুই মিলিয়ন বা দশ থেকে বিশ লাখ। ধীরে ধীরে সেই শিশু যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় অর্থ্যাৎ সাবালিকা হয় তখন মাসিকের সময় পরীক্ষা করে দেখো গেছে যে তার শরীরে ডিম্বানুর পরিমান প্রায় চল্লিশ হাজার। যদি খেয়াল করি তবে বোঝা যায় প্রায় বেশিরভাগ ডিম্বাণুগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

প্রতিটি মেয়ের মাসিকের সময় এই ডিম্বানুগুলি পরিপক্ক হয়। এই সময়কালটি মুলত 28-30 দিন হয়ে থাকে। যখন ডিম্বনালিতে ডিম্বানুটি আসে তখন যদি সে কোন পুরুষের সাথে মিলন করেন এবং পুরুষের শুক্রানু তার ডিম্বানুর সাথে মিলে নিষিক্ত হয় তখন জাইগেট তৈরির মাধ্যেমে তা জরায়ুতে প্রবেশ করে এবং একটা ভ্রুন তৈরি হয়। আর এই ভ্রুনটিই ধীরে ধীরে মানব শিশুতে রুপান্তরিত হয়। এটাই স্বাভাবিক প্রদ্ধতি।

এখন আমরা আলোচনা করবো এই স্বাভাবিক পদ্ধতি ব্যাঘাত ঘটে কিভাবে অর্থ্যাৎ সন্তান না হওয়া : জানা অজানা নানা রকম কারণ নিয়ে।

দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও যদি আপনার বচ্চা না হয় তাহলে আপনি IVF Specialist – Dr MD Rafiqul Islam Bhuiyan সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

  1.  কোন কারনে Polycystic Ovarian Syndrome এ সমস্যা হলে অথবা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে বা Prolectine হরমোন বেড়ে যায়। এর কারনে ডিম্বাণু পরিস্ফুটন নাও হতে পারে বা বড় নাও হতে পারে। আর ডিম্বানু স্বাভাবিক বিকাশ না ঘটলে নারী সন্তান জন্মদানে অক্ষম বলে বিবেচিত হয়।
  2. মানবদেহে যেসব প্রজননতন্ত্র আছে- জরায়ু, জরায়ুর দু’পাশে ডিম্বনালি আছে তার নিচে আছে মাসিকের রাস্তা বা যোনিপথ। যদি কারও ডিম্বনালিতে সমস্যা থাকে বা বাধা থাকে সেক্ষেত্রেও স্বাভাবিক সন্তান ধারণে সমস্যা দেখা দেয়।
  3. ইনফেকশনের কারণে কারও ডিম্বনালি যদি কেটেই ফেলা হয় বা কারও যদি টিউমার লাইগেশন করে দেয়া হয় সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী মিলন করলেও ডিম্বাণু নিষিক্ত হবে না। ডিম্বানু নিষিক্ত না হলে গর্ভধারন সম্ভব হয়ে ওঠে না।
  4. জরায়ুর ক্ষেত্রে জরায়ুতে টিউমার হতে পারে। এর ফলে যদি কোনো সমস্যা হয়, ভ্রূণটা যদি জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করার সুযোগ না থাকে বা জরায়ুর চামড়া যদি কোনো কারণে পাতলা হয় তাহলে ভ্রূণ সেখানে প্রতিস্থাপন হবে না। তখন ওই নারী সন্তান ধারণে অক্ষম বলে বিবেচিত হবেন। অনেক সময় জরায়ুর মুখে নানাবিধ সমস্যা হয়। ইনফেকশন হয়ে যদি জরায়ুর মুখ সংকীর্ণ হয় বা বীর্য কোনো কারণে জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করতে বাধা পায় তাহলেও সন্তান লাভ করতে পারে না।
  5. খুব কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে নারীর যোনিপথ প্রকৃতিগত কারনে বাকা হতে পারে। যোনিপথ যদি বাঁকা থাকে, যোনিপথে যদি কোনো ধরনের পর্দা থাকে বা যোনিপথের মুখে যদি কিছু থাকে তাহলে স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক ভাবে সহবাস করতে পারেন না বা সহবাস হলেও স্পার্ম জরায়ুতে ঢুকতে না পারারই সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রেও তাহলে সন্তান হবে না। নারীর প্রজননতন্ত্রের আশপাশে যদি কোনো সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে তা বাচ্চা হতে বাধা সৃষ্টি করে।
  6. পুরুষের শারীরিক সমস্যার জন্যও সন্তান জন্ম না নিতে পারে। পুরুষের শুক্রাণু যদি না থাকে বা শুক্রাণু যদি কম থাকে বা যদি তাদের সহবাসে কোনো সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম হবে না। নানা কারণে পুরুষের শুক্রাণু নষ্ট হয়। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন উল্লেখযোগ্য একটা কারন।
  7. সন্তান ধারণে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। ২০ বছর বয়সে আপনি কীরকম জীবনযাপন করছেন, তা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। ৩৫ বছরের মধ্যে মহিলারা গর্ভধারণ করতে পারলেই তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। ছেলেদের ক্ষেত্রে সেই বয়সটা ৪০-এর মধ্যে।
  8. অতিরিক্ত বেশি কিংবা অতিরিক্ত কম ওজন বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হতে পারে। কম ওজন হলে মহিলাদের হরমোনের ব্যালেন্স সঠিক থাকে না। ফলে গর্ভধারণে সমস্যায় পড়তে হয়। একই অসুবিধা হয়ে থাকে পুরুষদের ক্ষেত্রেও।
  9. শ্বাসকষ্ট, তো বটেই, ধূমপান ক্যানসারের মতো মারণরোগও ডেকে আনে। কিন্তু জানেন কি, ধূমপান মহিলাদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়? সিগারেট শরীরের ফ্যালোপাইন টিউবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যা ডিম্বানু গর্ভে মসৃণভাবে পৌঁছাতে পারে না। এদিকে ধূমপান পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দেন। তাই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ধূমপান ত্যাগ করুন।
  10. গবেষকদের মতে, বন্ধ্যাত্ব থেকে দূরে থাকতে কম মদ্যপান করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই বিষয়টি প্রযোজ্য। অতিরিক্ত মদ্যপান পুরুষদের স্পার্মের গুণাগুণ নষ্ট করে।
  11. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা নানাভাবেই শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলে। এ থেকে হার্টের অসুখ, অ্যাজমা-সহ মানসিক রোগও হতে পারে। শুধু তাই নয়, বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণও দুশ্চিন্তা। মানসিক চাপ পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট ও স্পার্মের গুণাগুণ নষ্ট করে। এক্ষেত্রে মহিলাদের ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা হয়।

আর কখনও কখনও সন্তান জন্ম না নেয়ার পেছনে কোনো কারণ-ই থাকে না। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী কারও কোনো সমস্যা নেই, দু’জনেই সুস্থ এরপরও সন্তান গর্ভে আসে না- এমন ঘটনা ঘটতে পারে। শতকরা ১০-১৫ ভাগ ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে থাকে।

বিয়ের পর সব দম্পতিই বাবা-মা হতে চান। বাড়িতে নতুন অতিথি আসুক এটা সবাই চায়। কিন্তু অনেক সময় সন্তান ধারণে সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমান লাইফস্টাইলই সন্তান না হওয়া বা এর পেছনে বেশি দায়ী। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, সুস্থ পরিবেশে থাকার অভাব, অবাধ যৌনজীবনই বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই চিকিৎসকদের সর্বপ্রথম পরামর্শ, সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে সুস্থ জীবনযাপন করা অত্যন্ত জরুরি। নাহলে সংসারে নতুন সদস্য আনার প্ল্যান মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই শ্রেয়। ভাল বাবা-মা হতে হলে আপনাকেও তো পরিশ্রম করতে হবে।