DR. MD RAFIQUL
ISLAM BHUIYAN

Oregelbunden menstruation

অনিয়মিত মাসিক! কি কি কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে?

মাসিক বা ঋতুস্রাব একজন নারীর জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাসিক এর সময় যেমন একটা মেয়ে অনেক কাজেই সাধারন অসস্থি অনভুব করে ঠিক তেমনি সঠিক সময়ে মাসি না হলে তার চেয়ে বহুগুন চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকে। অর্থ্যাৎ অনিয়মিত মাসিক একটা নারীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক সময় ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।

অনিয়মিত মাসিক কি?

নারীর ঋতুচক্র বা পিরিয়ড সাধারণত ২৮ দিন পরপর হয়ে থাকে। ২৮ দিনের ৭ দিন আগে বা পরে, অর্থাৎ ২১ থেকে ৩৫ দিন পরপর হলেও তা যদি স্বাভাবিক নিয়মিত ব্যবধানে হয়, তাকেও সাধারনত স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষাং,  ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে মাসিক হলে এবং তা যদি ৩ দিনের কম বা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তখন তাকে অনিয়মিত মাসিক বা ঋতুচক্র বলে।

অনেক কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। মাসিক যদিও শরিররে একটা চক্র, তবে মানসিক পরিবর্তন মাসিকের সাথে গভীর ভাবে সম্পর্কিত। সাধারনত কি কি কারণে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে? এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপুর্ন তথ্য উপাত্ত নিয়েই আজকের আলোচনা।

অনিয়মিত মাসিক! – অনিয়মিত মাসিকের কারন সমুহঃ

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপঃ মাসিক মানসিক ও শারিরিক উভয়ের সাথেই জরিত। কখনো কখনো অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারনে স্বাভাবিক মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় দেখা যায়, অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক ভাবে হতাশাগ্রস্থ হলে মাসিকের স্বাভাবিক চক্র পরিবর্তন হয়। তখন অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে।
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়াঃ সাধারনত শরীরের ওজন একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়। অনেক সময় রোগ বা অন্য যে কোন কারনে শরীরের ওজন হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। আর এ ধরনের সমস্যা হলে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া অনিয়মিত মাসিকের একটি অন্যতম কারন। 
  • হঠাৎ ওজন অনেক কমিয়ে ফেলাঃ হঠাৎ ওজন বেরে যাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের জন্য সুবিধাজনক নয় ঠিক তেমনি হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ও শারিরিক ক্ষতির কারন। এক্ষেত্রে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিক মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটে থাকে। অনিয়মিত মাসিকের অন্যতম আরেকটি কারন হঠাৎ শরীরের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে কমে যাওয়া।
  • মাত্রাতিরিক্ত শরীরচর্চাঃ শরীরচর্চা প্রতিটি ব্যাক্তির জন্যই গুরুত্বপুর্ন। শরীরচর্চা শরীর ও মনকে ভাল রাখে। তবে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত এই শরীরচর্চাই শারিরিক সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শরীরচর্চা ও নানা কসরতের ব্যায়ামের কারনে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। এজন্য প্রত্যেকের উচিৎ শরীরচর্চার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রা মেনে চলা।
  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমঃ অনিয়মিত মাসিক মুলত হয়ে থাকে নারী দেহে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এর কারনে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস মুলত নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা জনিত রোগ। বিশ্বজুড়ে প্রায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ৮ থেকে ১০ শতাংশ নারী এই সমস্যায় ভোগেন। এই রোগে ডিম্বাশয়ে অনেকগুলো সিস্ট হয় বলেই এর এমন নামকরণ। এই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এর জন্য অনিয়মিত মাসিক হয়। এর ফলে চক্রে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাসিক হয় আবার কখনো কখনো দেরিতে হয়ে থাকে।
  • জরায়ুর টিউমার ও এন্ডোমেট্রিওসিসঃ একটা মেয়ের দেহে যতগুলি স্পর্শকার অঙ্গ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে অধিকতর স্থান হলো জরায়ু। জরায়ুতে কোন সমস্যা হলে তা অনেক বেশি ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়ায়। এই জরায়ুতেই হয়ে থাকে অনেক সময় টিউমার। এই টিউমারের কারনে মাসিকের স্বাভাবিক চক্র নষ্ট হতে পারে। জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তরের নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। এই এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ বা কলা যদি জরায়ুর বাইরে বাসা বাঁধে বা বর্ধিত হয়, তখন তাকে বলে এন্ডোমেট্রিওসিস। ডিম্বাশয়, পেটের ভেতরের আবরণী পেরিটোনিয়াম, বিভিন্ন লিগামেন্ট, অন্ত্র, সেপটাম, স্কার টিস্যু বা কাটা সেলাইয়ের ওপর জমতে পারে এই কোষ। জরায়ুর বাইরে অবস্থান থাকলেও মাসিক চক্রের সময় এই কোষগুলোর মধ্যেও নৈমিত্তিক পরিবর্তন ঘটে। মাসিকের সময় এর মধ্যে রক্তপাত হয় বা তীব্র ব্যথা হয়। (সুত্রঃ www.prothomalo.com
  • থাইরয়েডের সমস্যাঃ থাইরয়েড গ্রন্থি হল একটি নরম, প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যা ঘাড়ের সামনে, আদমের আপেলের ঠিক নীচে অবস্থিত। থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন, T4 এবং T3 তৈরির জন্য আয়োডিনের প্রয়োজন হয়, যা পুরো শরীরে বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য। থাইরয়েডের এই সমস্যা শরীরের গঠন বা কার্যকারিতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। থাইরয়েড সমস্যা মহিলাদের মধ্যে পুরুষের তুলনায়  প্রায় 5-6 গুণ বেশি । থাইরয়েডের সমস্যার কারনে শরীর পর্যাপ্ত স্বভাবকি হরমোন তৈরি করতে পারেনা। তার ফলেই অনিয়মিত মাসিক হয়।

 

  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এবং কপার টি ব্যবহার: অনেকেই সন্তান গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহন না করার কারনে বা এখন সন্তান না চাওয়ার কারনে জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য পিল এবং অনেক সময় কপার টি ব্যবহার করে থাকেন। পিল অনেক সময়ই স্বাভাবিক মাসিক চক্রে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং অনিয়মিত মাসিক এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
  • যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ দেনঃ অনেক মা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান। শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। বুকের দুধের সাথে নারীর শরিরের হরমোনগত নিরেট সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য সন্তান বুকের দুধ খেলে হরমোনের তারতম্যের প্রভাবে স্বাভাবিক মাসিকে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এজন্য অনিয়মিত মাসিক এর একটি কারন হতে পারে সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো।

তাই উপরোক্ত বিষয়সমুহ বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, মাসিক যেমন শারিরিক একটি চক্র, ঠিক তেমনি মানসিক একটা প্রবাহ। তাই  স্বাভাবিক ও নিয়মিত মাসিক নারীর স্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপুর্ন। এখানে একটি বিষয় বোঝা ‍উচিৎ, কখনো সখনো স্বাভাবিক মাসিকে এক আধটু তারতম্য হওয়াও স্বাভাবিক। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে প্রয়োজন হলে নিকটস্ত ডাক্তারের অথবা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন।