DR. MD RAFIQUL
ISLAM BHUIYAN

পুরুষ বন্ধ্যাত্ব

পুরুষ বন্ধ্যাত্ব: কারন, প্রথাগত ভুল ধারনা ও আধুনিক চিকিৎসা

মানুষের জীবন গতিশীল। এক যুগের পর আরেক নতুন যুগ আসে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম। বংশের প্রদীপ হিসেবে সন্তান সন্তুতি পিতার দায়িত্ব গ্রহন করে।

মানুষ জীবনে যত ধরনের উপর্জান বা আয় রোজগার করে তার মূলেই থাকে সন্তান বা পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে আরেকটু ভাল জীবন পরিচালনা করতে পারে।

একবার ভেবে দেখেছেন কি, কোন পুরুষ যদি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হন তাহলে কেমন হবে?

আসলে বন্ধ্যাত্ব শুধু যে নারীর হয় তা নয়, নির্দিষ্ট সংখ্যা বা পরিসংখ্যান না থাকলে ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণালব্দ ফলাফলে দেখা যায় যে, বন্ধ্যা বা সন্তান জন্মদানে অক্ষম ব্যাক্তিদের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যক নারী এবং পুরুষ থাকে। অর্থাৎ বন্ধ্যাত্বের হারে নারী পুরুষ বন্ধ্যাত্ব এবং নারী বন্ধ্যাত্ব প্রায় সমান। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো আমাদের সমাজ পুরুষ বন্ধ্যাত্বের ব্যাপারে একেবারেই নীরব। কোন পরিবারে সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা থাকলে পশ্চাদপর এই সমাজ ধরেই নেয় যে, স্ত্রীর মধ্যেই রয়েছে সমস্যা। সমাধান বলতে এই সমাজ মনে করে নতুন বিয়ে করলেই বাবা ডাক শোনা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সমস্যার সমাধানের নামে এই ধরনের কার্যক্রম পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে পুনরায় আনয়ন করে।

পুরুষ বন্ধ্যাত্বঃ কি

ডাক্তারি ভাষায়, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব বলতে, নিয়মিত এবং অরক্ষিত যৌন মিলন সত্তেও এক বছরেরও বেশি সময় পর সন্তান জন্মদানে সক্ষম একজন নারী সঙ্গীকে গর্ভধারণ করতে না পারাকে পুরুষ বন্ধ্যাত্ব বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

মানষিক অবসাদ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা নানা ভাবে পুরুষ বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা সামনে নিয়ে আসে।

পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারনঃ

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, অনেক কারনেই একজন পুরুষ বন্ধ্যা বা সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে থাকে। নিম্নে প্রধান কিছু কারন উল্লেখ করা হলঃ

সাধারনত পুরুষের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম ও মূল কারন হলো শুক্রাণুর মান নিম্ন ও সংখ্যা কম হওয়া। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা যদি ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটির কম হয় তবে প্রাকৃতিকভাবে উক্ত পুরুষের দ্বারা গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।

  1. দুর্বল শুক্রাণুর গুণমানঃ এমনকি অনেক শুক্রাণু থাকলেও, তারা সঠিকভাবে আকৃতি বা নড়াচড়া করতে পারে না, এটি তাদের পক্ষে ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছানো এবং নিষিক্ত করা কঠিন করে তোলে।
  2. কম শুক্রাণুর সংখ্যাঃ যদি একজন পুরুষের বীর্যে স্বাভাবিকের চেয়ে কম শুক্রাণু থাকে, তাহলে এটি নিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
  3. অভ্যান্তরিন ব্লকেজঃ শুক্রাণু বহনকারী টিউবগুলিতে কোন ধরনের ব্লকেজ থাকলে তা শুক্রানুকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারে।
  4.   ডি এনে এ বা জেনেটিক কারনঃ কখনও কখনও, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব জেনেটিক অবস্থার সাথে যুক্ত থাকে যা শুক্রাণু উৎপাদন বা কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।
  5. ডায়াবেটিসঃ ডায়েবেটিস কে বলা হয় সকল রোগের সাথে সম্পৃক্ত এমন এক রোগ যার দ্বার অন্য যে কোন রোগের ঝুকি বেড়ে যায় বহুগুন। ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ব্যাক্তির শুক্রানু অনেক সময়ই সন্তান জন্মদানে পরিপক্ষ না হতে পারে। যদিও এর হার অনেক কম কিন্তু এই সমস্যাটিও বাড়ছে।
  6.   হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ হরমোনের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা শুক্রাণু উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে।
  7. অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধাঃ অনেক সময় নানা জটিলতায় অপারেশনের টেবিলে ছুড়ির নিচে অনেকের ই শুতে হয়। এই অস্ত্রোপাচারের কারনে সৃষ্ট কোন সমস্যার দ্বারা একজন পুরুষ সন্তান দানে অক্ষম হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর হার কম হলেও অনেক সময় ভুল চিকিৎসায় এমনটি হয়ে থাকে।
  8. প্রজনন অঙ্গে কোন ধরনের আঘাতঃ পুরুষের প্রজনন অঙ্গ তার সবচেয়ে ‍মূল্যবান শারীরিক সম্পদ। যদি কোন কারনে লিঙ্গ আঘাত প্রাপ্ত হয় তবে পরবর্তিতে এই আঘাতের মাত্রার তৃীব্যতার কারনে একজন পুরুষ স্থায়ী ভাবে বাবা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
  9. প্রজনন অঙ্গে যক্ষাঃ যক্ষা হলে রক্ষা নেই, এই কথার ভিক্তি নেই। যক্ষা এখন বর্তমান সময়ে চিকিৎসায় নিরাময় খুবই সম্ভব। তবে এই মারাত্বক ব্যধি যক্ষা যদি কারো প্রজনন অঙ্গ অর্থ্যাৎ পুরুষের যৌনাঙ্গে হয় তবে এর দ্বারা সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে।

উপরোক্ত কারন সমুহ ছাড়াও নিম্নলিখিত কারনে একজন পুরুষের সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা প্রকাশ পেতে পারে। যেমনঃ

      এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। তার নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না।

    শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অণ্ডকোষ, কোন কারণে সেটি তৈরিই হয়নি।

    অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু তা অতিব দুর্বল থাকে ফলে তা সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।

      আবার শুক্রাণুর পরিমান ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।

    এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও ‘সিক্রেশন’ হতে হবে।

 

এত কিছু সত্তেও পুরুষরা এ বিষয়টা চেপে যায়, কারণ সমাজের ধারণাটা এমন হয়ে দারিয়েছে যে, পুরুষদের কোন সমস্যা থাকতে পারবেনা।  বন্ধ্যাত্ব জনীত সমস্যা কেবলই নারীর। কিন্তু এটা আসলে মোটেও ঠিক নয়। সমস্যা যেহেতু আছে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান ও রয়েছে।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে পুরুষ বন্ধ্যাত্ব থেকে রোগীকে অনেকাংশেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়ে থাকে।

সুষম খাদ্য গ্রহন, খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তন, এলকোহল থেকে দুরে থাকা এবং ধুমপান বর্জন স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ্য শরীরের জন্য কার্যকরি।

সাধারন কথায় যেহেতু অন্ডেকোষ ই হলো শুক্রানুর আশ্রয়স্থল সেক্ষেত্রে এই অন্ডকোষ এর স্বাভাবিক যত্ন এবং ঠিলেঠালা পোশাক পরিধানের মাধ্যমে সম্পুর্ন যৌনাঙ্গ ও অন্ডোকোষের পরিচর্যা করা উচিৎ। বিজ্ঞানের মতে, টাইট আন্ডারওয়ার পরিধানে অন্ডকোষের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বেড়ে যায়।

এর বাহিরে যথাযথ ডাক্তারি চিকিৎসা গ্রহন এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন থেকে বের হয়ে আসলে একজন পুরুষ বেশির ভাগ সময়েই মুক্তি পেতে পারে বন্ধ্যাত্ব নামক ব্যাধি থেকে।