আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবারের কোন বিকল্প নেই। বেচে থাকতে হলে খাদ্য গ্রহন করতে হবে। কিন্তু শুধু বেচে থাকলেই হবে না। সুস্থ ভাবে বাচতে হবে। আর সুস্থতার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহন পর্যাপ্ত নয়, অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যান্ত জরুরি। একজন মানুষকে সুস্থ সবল থাকতে হলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করা উচিৎ।
পুষ্টিকর খাবার কি? পুষ্টিকর খাবার বলতে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আদর্শ হিসেবে ছয়টি গ্রুপের খাবারের সমন্বয় করাকে বোঝানো হয়।
খাবারের এ ছয়টি গ্রুপ বলতে যে খাদ্য উপাদানকে বোঝায় তা হলোঃ
শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ, পানি ও চর্বি।
আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। এসব দরিদ্র মানুষের অধিকাংশই নানাবিধ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তবে একটা জিনিস গুরুত্বপুর্ন যে, শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠি নয়, অনেক ক্রয়ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষও পুষ্টিহীনতায় ভোগে বেশি। এর মূল কারন হলো পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব। পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যায়ের প্রয়োজন হয়না। পুষ্টিবিদদের মতে, একেক বয়সে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা একেক রকম হয়ে থাকে। বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে পুষ্টিকর খাবারের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। সাধারনত নারী পুরুষ উভয়ের, বয়ঃসন্ধিকাল এবং গর্ভ ধারণের সময় নারীদের পুষ্টির চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। বাংলাদেশে মা-শিশুর পুষ্টির দিকটি অনেক ক্ষেত্রে বর্তমানে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়ের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথ গুরুত্ব পায় না। এছাড়া মানুষের বার্ধক্য উপনীত হলে তখন তাদের অধিক পুষ্টিকর খাবার দরকার হয় কেননা তখন নানাবিধ রোগ শরীরে বাসা বাধে। কিন্তু অধিকাংশই দেখা যায় প্রবীনদের পুষ্টির দিকটি অবহেলিতই থেকে যায়।
সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ
সুস্থ থাকতে হলে এবং শরীর ও মনের স্বাভাবিক গঠনে পুুষ্টিকর খাবার বিশেষ ভুমিকা পালন করে। চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং বিশ্বব্যাপি সেরা পুষ্টিবিদদের মতামত অনুসারে পুষ্টিকর খাবারের কিছু গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিচে তুলে ধরা হলো।
অপুষ্টিজনিত রোগ দুরীকরনেঃ পুষ্টির অভাবে নানাবিধ রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধে। এ সমস্ত রোগ গুলিকে অপুষ্টিজনিত রোগ বলা হয়। আমাদের খাদ্য তালিকায় সাধারনত চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণ ভাত ও অপর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সম্বলিত খাদ্য অধিক পরিমানে থাকে। যার কারনে অন্য যে পুষ্টিকর খাবারগুলো রয়েছে, যেমন শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ-ডাল, তা খাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা জোর দেয়া হয় না। আর এর কারনেই শিশুকাল থেকেই নানাবিধ অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শুরু হয়। বয়সের সাথে সাথে পুষ্টিহীনতা যেমন বাড়ে তেমনি অপুষ্টিজনিত রোগ ও বাড়ে। এসব অপুষ্টিজনিত রোগ দুরীকরনে পুষ্টিকর খাবার বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
মানসিক বিকাশেঃ মানুষের সার্বিক মানসিক বিকাশে পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব বর্ণনাতীত। খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার আপনাকে দিবে সুষ্ঠ মস্তিস্ক গঠনের নিশ্চয়তা। ছোট বেলা থেকেই মানুষের মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে আয়োডিন, প্রোটিন ও ভিটামিন। পুষ্টিকর খাবারের প্রভাব দেহের মতো মনেও সমান গুরুত্বপুর্ন। মানসিক অবসাদ দুরিকরন ও সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ অসুস্থতা অস্বাভাবিক কোন নিয়ামক নয়। শরীরে নানা ধরনের জীবানুর আক্রমন অথবা নানাবিধ কারনে রোগ হতে পারে। তবে নিয়ম মেনে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন আপনার শরিরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহুগুনে বৃদ্ধি করে। আপনার সন্তান যদি ঘন ঘন অসুস্থ হয় তবে ধরে নিন তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব। ভিটামিন এক্ষেত্রে মূল ভুমিকা পালন করে থাকে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা।
অবসাদ ও ক্লান্তি দুরীকরনেঃ অল্প পরিশ্রমেই আমরা অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে যাই। আবার নানা করনে সহসাই আমাদের মনে অবদাসের সৃষ্টি হয়। সঠিক রুপে যদি পুষ্টিকর খাবার গ্রহন সম্ভব হয় তবে মানসিক অবসাদ ও শারিরিক ক্লান্তিবোধ অনেকাংশে দুরীকরন সম্ভব। পুষ্টিকর খাবারের উপাদান সমুহের মধ্যে খনিজ ও আমিষ অবসাদ ও ক্লান্তি দুরীকরনে সহায়ক হয়।
আমাদের শরীরে পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব লিখে প্রকাশ করার মতো নয়। শরীর ও মেধার স্বাভাবিক বিকাশ ও সুস্থ থাকতে পুষ্টিকর খাবারের উপকারিতা অনেক।
পুষ্টিবিদদের মতে পুষ্টিকর খাবারের উপকারিতা গুলি হলোঃ
- রোগ প্রতিরোধ করে
- দেহের খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে
- রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে
- দেহের গঠন ও বৃদ্ধি সাধন করে
- রক্ত চলাচলে সাহায্য করে
- দেহকে ঠান্ডা ও সচল রাখে
- দেহের ক্ষয়পূরণ করে
- দেহের বর্জ্য নিঃসরণে সাহায্য করে
- তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে
চিকিৎসা গবেষক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত যে, একটি সন্তান জন্ম থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অতীব জরুরি। খাবার ছাড়া যেমন কোন প্রানী বা মানুষ বাচে না তেমনি পুষ্টিকর খাবার ছাড়া শরীর ও মনের সুষ্ঠ বিকাশ কল্পনা করা যায় না।