বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে কত রকম পরামর্শই তো মানুষ দিয়ে থাকে। আমরা যারা গ্রামে বাস করি সাধারনত বিভিন্ন ধরনের তাবিজ কবচ থেকে শুরু করে কত রকম পন্থাই তো অবলম্বন করি। কিন্তু এর মাধ্যমে কি বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি মেলে? হয়তো আপনার বিশ্বাস আপনাকে এসব কাজ করতে বাধ্য করে। আমি সমালোচনা করবো না। আমাদের দেশের পেক্ষাপট ও সংস্কৃতিতে এসব অতপ্রত ভাবে জরিয়ে আছে। শহরে মানুষের মধ্যে এসবের হার কিছুটা কম হলেও সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি।
চিকিৎসা সেবার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে বর্তমানে সঠিক চিকিৎসা যথাযথ জীবনমান পরিমিত খাদ্যাভাস ও সঠিক ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন আপনাকে অনেকাংশেই বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে।
দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও যদি আপনার বচ্চা না হয় তাহলে আপনি IVF Specialist – Dr MD Rafiqul Islam Bhuiyan সাথে যোগাযোগ করতে পারেন
চিকিৎসা বিজ্ঞান, বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং গবেষকদের মতে কিছু জিনিস গ্রহন সঠিক করে মেনে চলা এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব থেকে মু্ক্তি পাওয়া সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন।
বন্ধ্যত্ব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবেঃ
আজকের আলোচনায় কিভাবে বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাবে সেই বিষয়ে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
১। সহবাসের সঠিক পজিশনঃ
অনেকেই পর্ন মুভি দেখে সহবাসের সঠিক পজিশন নিয়ে নানা রকম দ্বীধায় ভুগেন। মনে রাখতে হবে অবশ্য যে, ছবি আর বাস্তবতা এক না। সহবাসের মাধ্যমে আপনি যখন বাচ্চা জন্মদিতে যাবেন তখন অবশ্যই সহবাসকে নিয়মতান্ত্রিক করতে হবে। কয়েকটি সুন্দর এবং কার্যকরি পদ্ধতি রয়েছে যেগুলির মাধ্যমে সহবাস করলে শুক্রানু দ্রুত সুন্দর সহজ উপায়ে নারীর ডিম্বানুর সাথে জরায়ুতে প্রবেশ করে। উদাহরন স্বরুপঃ
- মিশনারি পজিশন
- ডগি স্টাইল
- সাইড-বাই-সাইড সিজরস
এসব পজিশনে সহবাসের মাধ্যমে খুব সহজেই গভীর পেনট্রেশন হয় এবং গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেরে যায়।
২। সহবাসের সময় অর্গাজমঃ
গর্ভধারণের জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভযের অর্গ্যাজম হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ সহবাসের সময় নারীদেরও পুরুষের সঙ্গে অর্গ্যাজম হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুজনেরই অর্গ্যাজম হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলাদের অর্গাজমের সময় দেহের সকল অঙ্গ বিশেষ করে জরায়ুতে এক ধরনের সংকোচন হয় যেটা শুক্রাণুকে জরায়ুর গভীর দিকে ঠেলে দেয়।
৩। সহবাস শেষে প্রয়োজনীয় কাজঃ
সহবাসের ক্ষেত্রে এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে শুক্রানু জরায়ুর গভীর দিকে গিয়ে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার পরিবর্তে যাতে কখনও শুক্রাণু যেন যোনি থেকে বেরিয়ে না আসে। সঙ্গমের সময় নারীর নিতম্ব এমন অবস্থায় থাকা উচিত যাতে সঙ্গমের পরে শুক্রাণুগুলি সহজে সাধারন ভাবে ভেতরে যায় এবং গভীরে পৌঁছানোর জন্য প্রচুর সময় ও সহায়তা পায়। যৌনসঙ্গমের সময় কোনও গর্ভ-নিরোধক বড়ি অথবা তেল বা কোনও ধরনের জেলি ব্যবহার পরিহার করাই উত্তম বলে বিবেচিত।
৪। পুষ্টিকর খাবারঃ
বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। আয়োডিন, মিনারেল, জিংক ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে ভুমিকা রাখে। পুষ্টিকর খবার তালিকা নিয়ে আমার একটি লেখাতে চোখ বোলাতে পারেন। বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে যেসব খাবার বেশি বেশি খেতে হবে ।
৫। পর্যাপ্ত ঘুমঃ
পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। একটা ইংরেজি প্রবাদে আমরা জানি, দ্রুত ঘুমিওয় যাওয়া ও দ্রুত ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। পর্যাপ্ত ঘুম পুরুষের শুক্রানুর মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে। নারীদের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থার অন্যতম পাথেও হলো পর্যাপ্ত ঘুম। মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি এবং সুস্থ্যতায় পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই।
৬। রাসায়নিক থেকে দুরে থাকাঃ
বিশেষত পুরুষ মানুষ যারা বিভিন্ন কাজের সুবাদে রাসায়নিক দ্রব্যের সাথে কাজ করতে হয় তাদের শুক্রানুর মান কমে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত গরম অঞ্চলে কাজ কাজ করার কারনেও শুক্রানু দুর্বল হয়ে পরে। নারীদের ব্যাপারে তাদের জরায়ু রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্স পেলে নানাবিধ স্ত্রী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। তাই সকল প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থেকে দুরত্ব বজায় রাখা খুব জরুরি দায়িত্ব।
৭। ওজন নিয়ন্ত্রন করাঃ
অতিরিক্ত ওজন যেমন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারন তেমনি অতিরিক্ত ওজন আপনার স্বাভাবিক রাতিক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। অতিরিক্ত ওজনদার মানুষ সহবাসে পরিতিপ্তি পায়না। নানাবিধ সমস্যায় ও রোগে আক্রান্ত থাকে। ফলে ডায়াবেটিকস এর ঝুকিও থাকে। অতিরিক্ত ওজনের কারনে বন্ধ্যাত্ব বাসা বাধা এখন কমন বিষয় হয়ে দারিয়েছে। তাই নারী বা পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে ওজন নিয়ন্ত্রন করা খুবই জরুরি।
৮। চেষ্টা অব্যাহত রাখাঃ
সাধারনত সঠিক উপায়ে কোন রকম জন্ম নিয়ন্ত্রক ব্যাবস্থা গ্রহন না করার পরেও সহবাসের ফলে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হলে তাকে বন্ধ্যাত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে অনেক সময় প্রথম ১ বছরেই সফলতা আসে না। হতাশ হওয়া যাবেনা। চেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে এবং মাসিক চক্রের সাথে সমন্বয় সাধন করে নিয়মিত সহবাস করতে হবে। মাসিকের ১৪ তম দিন থেকে নারীর জরায়ু বাচ্চা জন্মদানের জন্য সবচেয়ে বেশি উর্বর থাকে। এই সময়ে সহবাস ভাল ফলাফল আনবে।
৯। সহযোগী মনোভাব বৃদ্ধি করাঃ
একে অপরের প্রতি সর্বদা সহযোগী মনোভাব স্থাপন করতে হবে। বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে হলে এর কোনই বিকল্প নেই। সব সময় নারীর উচিৎ সহবাসে নিজেকে সচল রাখা এবং সর্বদা পুরুষকে সাহায্য করা। পুরুষের দায়িত্ব হলো নারীকে পর্যাপ্ত অর্গাজমে ও সহবাসের পরেও সহযোগীতা করা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া দারুন করে নিতে হবে।
১০। মানসিক সমর্থন নেওয়াঃ
বন্ধ্যাত্ব যতটা শারিরিক ঠিক ততটাই মানসিক সমস্যা। অন্তকলহ বা অন্ত কোন্দল বন্ধ্যাত্ব ও নানাবিধ সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে। তাই স্বামী স্ত্রী ও আসে পাশের মানুষের উচিৎ একে অপরকে সাহায্য করার পাশাপাশি সর্বদাই মানসিক সমর্থন দেওয়া। নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারবো। আমরা পারবো। এই ধরনের মানসিক সমর্থন বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার শর্ত। তাই মানসিক সমর্থন নিন। একে অপরকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে তুলুন।
সর্বশেষ যে গুরুত্বপুর্ন কথাটি বলা যায় তা হলো, আমাদের যেমন যে কোন কাজে আমরা সঠিক পরামর্শ গ্রহন গুরুত্বপুর্ন মনে করি বন্ধ্যাত্বের বেলায় ও তাই। আমাদের গাড়ীতে কোন সমস্যা হলে আমরা অটোমোবইলস এর গ্যারেজে যাই, বৈদ্যতিক সমস্যা হলে ইলেকট্রনিক বিশেষজ্ঞ এর নিকট যাই। ঠিক তেমনি বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে সঠিক ডাক্তারের গাইডলাইন জরুরি। একটা পরিবার বা ব্যাক্তিজীবনে যত দ্রুত আপনি এই বন্ধ্যাত্ব থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন ততেই মঙ্গল। বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক পরামর্শ ও সেবার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সাথে।