সাধারনত নারীর গর্ভধারণে অক্ষমতা প্রকাশকে চিহ্নিত  করাই হলো নারী বন্ধ্যাত্বের প্রথম লক্ষণ। তখন  নারী সন্তানদানে অপারগ হোন এবং এর মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনকে কলুষিত করে তোলেন। তিনিই সমাজে হলেন একজন বন্ধ্যা! সমাজে অনেক নারী এখনো এই জীবদ্দশায় বন্ধ্যাত্ব নিয়ে বিপদের সাথে মোকাবিলা করছে। আজকের সময়ে এসে বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে কুসংস্কার ধারণ করা নিতান্তই কমে গেছে। মানুষ এখন আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে বন্ধ্যাত্ব মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে। 


নারী বন্ধ্যাত্ব হলো একজন নারীর বাচ্চা লাভের ইচ্ছাকে ধূলিসাৎ করা এবং নিজেকে অবহেলিত মনে করা। ডিম্বাশয় পরিপূর্ণ হওয়া থেকে শুরু করে নারীর পরিপূর্ণ জনন কাজে লিপ্ত হওয়ার ব্যাঘাট থেকেই ঘটতে পারে নারীর জননক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। সুতরাং এখানে সারবস্তু হলো নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে বিশদভাবে জানা জরুরি। এতে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে জীবনে ফিরে আসবে ভরপুর তারুণ্য ও যৌবনের সুখ শান্তি। একজন নারীর যখন ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এন্ডোমেট্টিওসিস দেখা দেয় তখনি তার বন্ধ্যাত্ব হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। তাই আসুন, নারী বন্ধ্যাত্ব নিয়ে কুসংস্কার দূর করা যাক।

নারী বন্ধ্যাত্বের পাঁচ লক্ষণসমূহঃ


১)এন্ডোমেট্টিওসিস

সাধারণত এন্ডোমেট্টিওসিস হলো জরায়ুর ভিতরে একটিটিস্যু বৃদ্ধি পাওয়া অর্থাৎ ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং অন্যান্য অংশে টিস্যু ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অনেকের ব্যথা অনুভব হয়,অনেকের আবার কিছুই হয় না।যখন আপনার পেটে ব্যথা অনুভব হবে তখন সেই পরিস্থিতিতে আপনার লক্ষণটি হলো এন্ডোমেট্টিওসিস অর্থাৎ বন্ধ্যাত্বের পূর্বশর্ত।তাছাড়া সহবাসে ব্যথা পাওয়া এবং বমি বমি ভাব হওয়া এন্ডোমেট্টিওসিসের উপসর্গ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

কি কি লক্ষণ দেখা যায়? 

সাধারণত অনিয়মিত পিরিয়ড এবং যৌনতা নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব অবলম্বন করা জরুরি। মাঝেমধ্যে অন্ত্রের মধ্যে চাপ অনুভূত হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। আপনার মধ্যে এন্ডোমেট্টিওসিস হওয়ার আশংকা বেড়ে যাবে যখন আপনার পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূতি প্রকাশ পাবে। এই ব্যথায় রোগী কাতরাতে থাকেন এবং বন্ধ্যাত্বের নিদর্শন হিসাবে ধরা হয়।অতি অল্প বয়সে পিরিয়ড হওয়া এবং বিলম্বিত পিরিয়ড হওয়ার জন্য এন্ডোমেট্টিওসিসকে দায়ী মনে করা হয়ে থাকে। 


এন্ডোমেট্টিওসিস প্রতিকারঃ

ব্যথা ঔষধ – সাধারণত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তাররা নন স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগ খেতে উপদেশ দিয়ে থাকেন।যেমন: অ্যাসপিরিন,ন্যাপরক্সেন সহ যাবতীয় ব্যথার ঔষধ রয়েছে। এই ঔষধ সেবনের ফলে আপনি সাময়িক ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।


হরমোন থেরাপি -হরমোন থেরাপির সাহায্যে আপনি সহজেই হরমোন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন। এন্ডোমেট্টিওসিস প্রতিরোধে হরমোন থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর বলে মনে করা হয়ে থাকে কারন হরমোন থেরাপি দিয়ে টিস্যুর বৃদ্ধি হ্রাস করা যায়। এতে এন্ডোমেট্টিওসিসের প্রভাব কমে যাবে তথাপি ব্যথা কমে যাবে। সাধারণত হরমোনেল কন্ট্রাসেপটিভ, প্রজেস্টিন থেরাপি এবং অ্যারোমাটেজ ইনহিবিটর হলো উল্লেখযোগ্য হরমোন থেরাপি। 


উর্বরতা চিকিৎসা -সঠিক চিকিৎসা দিয়ে আপনি এন্ডোমেট্টিওসিস থেকে রেহাই পেতে পারেন। এজন্য আপনার উর্বরতার চিকিৎসা নেয়া যথাযথ জরুরি বলে মনে করা হয়।


২)মাসিক চক্রের অনিয়ম 

মাসিক চক্রের অনিয়ম এখন খুবই কমন সমস্যা। সাধারণত দেখা যায়, পিরিয়ড অনিয়মিত হলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। এছাড়া ডিম্বাণু স্ফোটনের সময় না পেলে বন্ধ্যাত্ব অনস্বীকার্য। অনিয়মিত ঋতুচক্র হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামে পরিচিত। এর জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় যেমন- অতিরিক্ত লোম গজানো,স্থূলতা ও কন্ঠস্বরের পরিবর্তন আসা ইত্যাদি। 


মাসিক চক্র অনিয়মের কারন-


চিকিৎসাঃ


৩) ডিসপারিউনিয়া

ডিসপারিউনিয়া হলো সেক্সের সময়ে হওয়া ব্যথা যা যৌন উদ্দীপনায় প্রভাবিত হয়। এই ব্যথা সংক্রমন ও অ্যান্ডোম্যাট্টিওসিস এর চাপকে প্রসারিত করে তোলে।এই ব্যথা জরায়ু ও জরায়ুর আশেপাশে অঞ্চলে ছড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি পুরুষ ও মহিলা উভয়ই ডিসপারিউনিয়া এর শিকার হতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এটি বেশি প্রতিফলিত হয়ে থাকে। 


কারনসমূহঃ


চিকিৎসাঃ

১) যদি হরমোনের সমস্যার জন্য যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যায় তাহলে ইস্ট্রোজেন এর মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ডিসপারিউনিয়া থেকে মুক্তি লাভের আশা করা যায়। 

২) অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল ঔষধ সেবনের দরকার পড়তে পারে। 

৩) কাউন্সিলিং করে প্রয়োজনীয় সব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। 



৪) হরমোনের সমস্যা 

হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি কারন এজন্য বন্ধ্যাত্ব অনেকাংশে নির্ভর করে। পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন যেমন বাড়ানো জরুরি ঠিক তেমনি নারীদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কার্যকারিতার উপর বন্ধ্যাত্ব অনেকাংশে নির্ভরশীল।


সঠিক চিকিৎসা : 

হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হলে সবচেয়ে ভালো উপায়। কারন এর মাধ্যমে আপনি নারীদের প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

৫) ইনহেরিটেন্স  ডিজিস 

কিছু বংশগতি রোগের কারনে আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে জটিল জটিল সমস্যা। ক্যান্সার রোগের ইতিহাস থেকে শুরু করে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি বর্তমান সময়ে নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যান্য-

অনেক সময় দেখা যায়, কিছু কিছু ফ্যাক্টর আপনার দেহে বিভিন্নভাবে জড়িত হয়ে বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হওয়া,খাবারে জাংক ফুড রাখা এবং ঔষধ সেবনের সাইড এফেক্টে খুব সহজেই আপনার জীবনযাত্রা পরিবর্তন আসতে পারে। তাই সঠিক উপায়ে জীবনযাপন করুন।

তাই নারী বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ নিয়ে সবাইকে সচেতন হওয়া লাগবে। ভয় না পেয়ে সাহসিকতার সহিত উন্নত আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে সামনে এগিয়ে চলা লাগবে  । ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিবাহিত দম্পতির সুখে জীবনযাপন করা নির্ভর করবে সঠিক চিকিৎসা ও গর্ভধারণ করার যোগ্যতা।তাই নারীদের মনোবল দৃঢ় রাখা আবশ্যক ।এতেই দূর হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন বন্ধ্যাত্ব।

দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও যদি আপনার বচ্চা না হয় তাহলে আপনি IVF Specialist – Dr MD Rafiqul Islam Bhuiyan সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *