আমরা বেচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহন করি। খাদ্য আমাদের শরীরে পুষ্টির যোগান দেয়। শরীর গঠন ও জীবন ধারনে খাদ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কর্মজীবী মানুষকে প্রশ্ন করেছিলাম, কাজ করছেন কেন? উত্তরে সহজ সাবলিল ভাবেই বলে দিলেন, খাওয়ার জন্য! অর্থ্যাৎ সহজ ভাষায় সুস্থ্যতার জন্য পরিমিত মাত্রায় খাবার গ্রহনের কোন বিকল্প নেই। এখন প্রশ্ন হলো সকল খাবারেই কি সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান? অবশ্যই না। একেক ধরনের খাবারে একেক পুষ্টি উপাদান থাকে। শরীর গঠনের জন্য সকল উপাদানই গুরুত্বপুর্ন। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান নির্দিষ্ট কাজে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। আমাদের খাদ্যের গুরুত্বপুর্ন একটি খাদ্য উপাদান হলো ভিটামিন। ভিটামিন হলো এমন এক ধরনের পুষ্টি উপাদান যা খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় কিন্তু উপকারের দিক দিয়ে যা অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। ভিটামিন আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।  ভিটামিন এর  অপর নাম হলো খাদ্যপ্রাণ। বৈজ্ঞানিক উপাদান ও  রাসায়নিক দিক থেকে এরা হলো কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন জাত এক ধরনের জৈব্যযৌগের একটি গ্রুপ। প্রানীর দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ভিটামিন গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। কোন ভিটামিন হয়তো হার গঠনে কাজ করে আবার কোন ভিটামিন রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে। কোন ভিটামিন মস্তিস্কে ডোপমিন নিঃসরনে সাহায্য করে আবার কোন কোন ভিটামিন শারিরিক মিলনে স্থায়ীত্ব বৃদ্ধিতে কাজ করে।

বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক যে কোনো পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসক Dr. MD Rafiqul Islam Bhuiyan স্যার এর সাথে

বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?

বাংলাদেশ তথা মুসলিম রীতি নীতিতে যেহেতু বিবাহের মাধ্যমেই বাচ্চা জন্মলাভ করে। সেক্ষেত্রে বিয়ের পরে স্বাভাবিক যৌন জীবন ১ বছর অতিবাহিত করার পরেও যখন স্ত্রীর গর্ভে বাচ্চা না আসে তখন তা বন্ধ্যাত্ব বলে বিবেচিত হতে পারে। অনেক সমস্যার কারনেই বন্ধ্যাত্ব নামক রোগ হতে পারে। নারী পুরুষ উভয়েই বন্ধ্যাত্বের কবলে পরতে পারেন যদিও আমাদের সমাজে বন্ধ্যাত্বে বোঝা নারীকেই বহন করতে হয় অধিক সময়। 

যে সকল কারনে মানব দেহে বন্ধ্যাত্ব নামক ব্যাধি বাসা বাধতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ভিটামিন এর অভাবে নারী পুরুষ উভয় ই বন্ধ্যাত্বের স্বীকার হতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো কোন ভিটামিনের অভাব আপনার বন্ধ্যাত্বের কারন হতে পারে?

বিজ্ঞানিরা এ নিয়ে বিস্তর গবেষনা করেছেন। তাদের গবেষনার ফল এবং বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিক্তিতে স্পষ্টতই বন্ধ্যাত্বের জন্য ভিটামিন ডি এর অভাব অনেকাংশে দায়ী।

ভিটামিন ডি এর অভাবে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

যেভাবে ভিটামিন ডি (D) এর অভাব আপনার বন্ধ্যাত্বের কারন হতে পারেঃ

১। নারীর ডিম্বানুর পরিমান অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়াঃ

ভিটামিন ডি সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপকরন হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে, ভিটামিন ডি-এর অভাব মহিলাদের গর্ভধারণের হার কমিয়ে দেয়। ভিটামিন ডি নারী দেহের জরায়ুর স্বাভাবিকতা রক্ষায় কাজ করে থাকে ।বন্ধ্যাত্ব নিয়ে গবেষনায় পাওয়া যায় যে, ভিটামিন ডি-এর মাত্রা যত বেশি হবে নারীর জরায়ুতে তত উচ্চ ও ভাল মানের ডিম্বাণু উৎপাদিত হবে। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর নিষেকের পর ভ্রুণ যখন জরায়ুতে অবস্থান নেয়, সেই প্রক্রিয়াতেও ভূমিকা রাখে ভিটামিন ডি।

ভিটামিন ডি Vitamin D নামক খাদ্যপ্রাণের অভাবে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর পরিমাণও কমে যায়। এসব বিষয় বিবেচনা করলে স্পষ্টতই নারীর বন্ধ্যাত্বের সাথে ভিটামিন ডি এর নিবির সম্পর্ক রয়েছে। যে সব মহিলার শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে, গর্ভধারণের সময় তাঁর শরীরে বিভিন্ন ধরনের ‍সমস্যা বহুগুণে বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ডি-এর অভাব স্বাভাবিকভাবে সন্তানধারণে বাধার সৃষ্টিও করে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ভিটমিন ডি-এর অভাব থাকলে উচ্চ রক্তচাপ এবং মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিসের সমস্যা তৈরি হয় ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক গবেষকগণ ও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

২। পুরুষের ইরেকটাইল ডিসফাংশন(ইডি)ঃ

ভিটামিন বা খাদ্যপ্রান শরীরের অঙ্গগুলি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে ভিটামিন-ডি শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। যৌন মিলনের সময় রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ও লিঙ্গের প্রয়োজনীয় উত্থান ও আকার বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে এই ভিটামিন।  Erectile dysfunction- ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ইডি) পুরুষের একটি যৌন সমস্যা। এই রোগে, পুরুষরা যৌন মিলনের সময় তাদের যৌন অঙ্গ প্রয়োজনীয় টান বা প্রসারিত হয়না। সহজ ভাষায় Erectile dysfunction কে উথান জনিত সমস্যা বলে। এর ফলে মিলনের মুহুর্তে বা পুর্ব মুুহুর্তে পুরুষের লিঙ্গ পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চয় করে বড় হয়না। কোন পুরুষ এই সমস্যায় পরলে সে এবং তার সঙ্গী কেউ ই যৌন মিলনে সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনা। ফলে স্ত্রীর গর্ভধারন বাধাগ্রস্থ হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।

মুলত ভিটামিন ডি এর অভাবেই এই Erectile dysfunction হয়ে থাকে। ভিটামিন ডি এর অভাবে পুরুষের এ সমস্যা হলে এর সঙ্গে আরও অনেক ধরণের যৌন সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দেয়। ইরেকটাইল ডিসফাংশনের অনেক কারণ থাকতে পারে। কিডনির রোগ, হার্টের সমস্যা, স্থূলতা, মানসিক চাপ, হতাশা এবং ডায়াবেটিস ছাড়াও ধূমপান, অ্যালকোহল বা ওষুধের ব্যবহার এর প্রধান কারণ। ভিটামিন ডি এর অভাবে পুরুষের দেহে  অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পাওয়া টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে লিঙ্গ উত্থিত বা অকার্যকারিতা দেখা দেয়। 

৩। নারীর এমব্রায়ো ইমপ্ল্যানটেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াঃ  

ইমপ্লান্টেশন সাধারনত নব নিষিক্ত বিকাশমান ভ্রূণ এবং মায়ের রক্ত ​​সরবরাহের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে। এই সংযোগ পুষ্টি এবং বর্জ্য পণ্য বিনিময়ের জন্য কাজ করে থাকে।, ভ্রূণের বৃদ্ধিতে প্রকৃত অর্থে কার্যকর ভুমিকা রাখে ইনপ্লান্টেশন। কিন্তু নারীর শরিরে ভিটামিন ডি এর অভাব এই ইমপ্ল্যানটেশন পক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এর কারনে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে কেননা সন্তান ধারনে এমব্রায়ো ইমপ্ল্যানটেশন স্বাভাবিক থাকা গুরুত্বপুর্ন।

তাই স্পষ্টতই মানুষের শরীরে খাদ্যপ্রাণের ভূমিকা যেমন অতিব গুরুত্বপুর্ন তেমনি বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধকল্পে ভিটামিন ডি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর সঠিক উপস্থিতি সন্তান জন্মদানে অনেকাংশেই সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তাই অবশ্যই ভিটামিক যুুক্ত খাবার গ্রহন করুন। বিশেষেত পেস্টুরাইজড মিল্ক, মাছ, ডিমের কুসুম,মাশরুম, গরুর কলিজাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি Vitamin D রয়েছে। এছাড়া সুর্যের আলো ভিটামিন ডি এর একটি গুরুত্বপুর্ন ও অমূল্য উৎস। 

ভিটামিন ডি নিয়ে আরেকটা আর্টিকেলে বিস্তারিত বর্ননা দেওয়ার চেষ্টা করবো। ততক্ষন পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন। বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে যে কোন সমস্যা বা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ঢাকার সেরা বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ রফিকুল ইসলাম ভুইয়ার সাথে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কমাতে পারে আপনার বন্ধ্যাত্বের ঝুকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *