গর্ভধারনের মাধ্যমে একজন নারী মা হওয়ার পথে পা বাড়ায়। সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় দিন সপ্তাহ বা প্রতিটি মহুর্ত গুনতে থাকা নারীটি যদি হঠাৎ বুঝতে পারে তার গর্ভের অনাগত সন্তান আর জীবিত নেই! একটা নারীর জীবনে চরমতম কষ্টের সংবাদই বলা যায় এটিকে। অনাগত সন্তান জন্মের পুর্বেই গর্ভে থাকার প্রাথমিক অবস্থায় মৃত্যুবরন করাকেই গর্ভপাত বলে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সাধারন অর্থে গর্ভধারণের প্রথম ২৮ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভাবস্থায় কোন শিশুর মৃত্যু হয়, তাকেই মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত বলা হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় এই সময়কাল ২৮ সপ্তাহের অধিক ও হতে পারে।

গর্ভপাতের এর ১১ টি কারনঃ

গর্ভপাত নানান কারণে হতে পারে। সাধারণত গর্ভের সন্তান অথবা মায়ের বিভিন্ন রোগ ও ত্রুটির কারণে গর্ভপাত ঘটে। মায়েদের অসাবধানতা ও অনেক সময় গর্ভপাতের কারন হয়ে ওঠে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেগর্ভপাতের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বের করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

  1. হরমোনের সমস্যাঃ নারীদেহে হরমোন সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন উপাদান স্বাভাবিক গর্ভধারন ও সন্তান প্রসবের জন্য। অনেক সময় গর্ভধারনের পরে, হরমোনের তারতম্যের কারনে গর্ভধারনের কয়েক সপ্তাহ পরেই গর্ভপাত হয়ে যায়।
  2. মা পরিশ্রম বা অতিরিক্ত ভ্রমণ করেনঃ যদি গর্ভবতী মা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করে অথবা মাত্রাতিরিক্ত ভ্রমন করেন তবে এর প্রভাব গর্ভের বাচ্চার উপর পরে থাকে। এসব কারনে অনেক সময়ই গর্ভপাত হয়ে থাকে।
  3. সিগারেট, মদ্যপান বা মাদক নেয়া বা প্রচুর ক্যাফেইন গ্রহণ করাঃ মাদক ও ধুমপান সর্বদাই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিমুলক। অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ভাল নয়। এসব উপাদান গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যে যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি অনাগত সন্তানকে ঝুকিতে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান আর সম্ভব হয়না। গর্ভপাত নামক কষ্টের সম্মুখিন হতেও হয় যা দীর্ঘমাত্রায় ক্ষতির কারন।
  4. জরায়ুর ত্রুটি, অস্বাভাবিক আকৃতি, টিউমার, উল্টো পজিশনে থাকাঃ জরায়ু নারীর দেহের সবচাইতে গুরুত্বপুর্ন স্পর্শকাতর জায়গা। এই জরায়ু দিয়েই যেমন যৌন সুখ উপভোগ্য হয় তেমনি সন্তান জন্মদান ও হয়। কোন শারিরিক ত্রুটি থেকে যদি জরায়ুতে ত্রুটি বা জরায়ুর আকৃতি অস্বাভাবিক হয় অথবা তা কোন বিপরীতমুখি অবস্থানে থাকে তখন গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেরে যায়। কোন ধরনের টিউমার যা জরায়ুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, এমন টিউমার ও নারীর সুপ্ত সন্তান অকালে গর্ভপাতের কারন।
  5. ডিম্বাশয়ের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় থাকাঃ নারীর ডিম্বাশয় সব নারীর এক আকার থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। পুরুষের লিঙ্গ যেমন শারিরিক আকৃতিভেদে ভিন্ন আকারের হয় তেমনি নারীর দেহের ডিম্বাশয়ও আলাদা হয়। তবে অবশ্যই তা শারিরিক আকৃতির সাথে মানানসই হবে। যদি কোন কারনে নারীর জরায়ুর ডিম্বাশয়ের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বড় থাকে তখন গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  6. জরায়ুর আকার অত্যন্ত ছোট থাকা, যেখানে বাচ্চা বড় হতে পারে নাঃ জরায়ুর আকার অধিক বড় হওয়া একটা সমস্যা আবার প্রায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছোট হলেও এর দ্বারা নানান জটিলতার সৃষ্টি হয়। জরায়ু ছোট হলে সেখানে বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবে উপযুক্ত হারে বড় হতে পারেনা। ফলে বাচ্চার জীবন ঝুকিতে পরে। অনেক ক্ষেত্রে অকাল গর্ভপাতের কারনে মা এর জীবন ও ঝুকিতে থাকে।
  7. একসাথে একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণঃ সাধারনত মানুষ একবারে ১ টি বাচ্চা জন্মদেন। তবে জমজ বাচ্চার মা হওয়া বিরল ঘটনা নয়। আমাদের চারপাশে এমন অনেক রায়েছে। এক্ষেত্র্রে একবারে একাধিক বাচ্চা গর্ভধারন করলে অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের ঝুকি তৈরি হয়।
  8. জরায়ুর মুখ দুর্বল বা খুলে যাওয়াঃ গর্ভধারনের পরপরই সবচেয়ে বড় ‍ঝকি গুলির একটি হলো জরায়ুর মুখ খুলে যাওয়া। অনেক সময় বাচ্চা জন্মদানের অনেক আগেই জরায়ু মুখ খুলে যায় ফলে বাচ্চা স্বাভাবিক আকার পাওয়ার আগেই প্রসব হয় অর্থাৎ গর্ভপাত হয়ে যায়। জরায়ু মুখ দুর্বল হলেও এ সমস্যা হতে পারে।
  9. মা, বোন বা ঘনিষ্ঠ স্বজনের মিসক্যারেজের জিনগত ইতিহাসঃ মিসক্যারেজ বা অকাল গর্ভপাত একটা নারীর জন্য অত্যান্ত বেদনার বিষয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের ঘনিষ্ট অর্থাৎ মা বোন খালা এদের গর্ভপাতের জিনগত ইতিহাস থাকলে তা আপনার মধ্যেও এসে থাকতে পারে। তবে পরিস্থিতি বুঝে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
  10. বিষাক্ত খাবার ও ওষুধঃ যৌন উত্তেজক ঔষুধ, নানা ধরনের সাইড ইফেক্ট (পার্শপতিক্রিয়া) সম্বলিত মেডিসিন আপনার সুন্দর অনাগত সন্তানের জন্য কাল হয়ে আসতে পারে। হতে পারে তার অপমৃ্ত্যু। তাই যে কোন ধরনের ঔষুধ খাওয়ার বেপারে সতর্ক হোন।
  11. স্থূলতা বা অতিরিক্ত মেদ, ওজনঃ মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা অধিক বেশি ওজন অনেক সময় শারিরিক নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব কারনে আপনার গর্ভপাতের মতো সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিজের খেয়াল রাখুন। যত্ন নিন।

গর্ভপাত সব সময়ই ই কষ্টের। অনেক সময় কোন কোন পরিবার নিজেদের ইচ্ছাতেই এবরশন বা  নানাবিধ উপায়ে স্বাস্থ্য ঝুকি এড়াতে গর্ভপাত করে থাকেন। হয়তো সঠিক প্লান করতে আরেকটু সময় নিতে চান। তবে এটাও অনেক ক্ষেত্রে ঝুকি পুর্ন।

সবশেষে আপনাকে ভাবতে হবে, গর্ভপাতের সমস্যাগুলি নিয়ে। যেসকল কারনে গর্ভপাতের সম্ভাবনা আছে সেসকল ঝুকি এড়িয়ে চলতে হবে। নিজের যত্ন নিন। সুস্থ থাকুন। প্রয়োজনে নিকটস্ত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *