স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার একটি কথা আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারাও ইহা প্রমানিত। শিশুর জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। মায়ের দুধ একটি শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর ও সেরা আদর্শ খাবার। শিশু বেড়ে ওঠে মায়ের বুকের দুধ পান করে। শিশুর জন্য পর্যাপ্ত দুধের যোগান দিতে হলে মাকে ও হতে হবে সুস্থ্য এবং গ্রহন করতে হবে পুুষ্টিকর খাবার। স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার হিসেবে সকল খাবার প্রযোজ্য নয়। কিছু কিছু বিশেষ খাবার আছে যা একজন স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য অধিক প্রয়োজনীয়। মা যেমন খাবার গ্রহন করবে সন্তান তেমন সুস্থ থাকবে। প্রাথমিক অবস্থায় যেহেতু মায়ের দুধই শিশুর জন্য একমাত্র ও প্রধান খাবার। পর্যাপ্ত খাবার, পরিমিত বিশ্রম, শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক দৃঢ়তা স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বাচ্চা যেমন মায়ের দুধ পান করবে মা তেমন করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করবে। তাহলে সন্তানের জন্য যেমন দুধের ঘাটতি হবেনা ঠিক মা ও তেমনি করে সুস্থ থাকবে।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্তন্যদানকারী মায়ের খাবারঃ
শিশু সন্তান যখন দুধ পান করবে তখন তার খাবারের উৎস একমাত্র তার মা। এজন্য মায়ের খাবারের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় কিছু খাবারের উপকারীতা নিয়েই আজকের আলোচনা। পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন মনোযোগ সহকারে এবং দেখে নিন স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার হিসেবে কি কি রাখা উচিৎ।
১। সর্বদাই প্রয়োজন তরলজাতীয় খাবারঃ
প্রতিবার যখনই মা তার শিশুকের বুকের দুধ পান করাবেন সম্ভব হলে তার পুর্বে অন্তত ২ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করে নিবেন। পানি একটা মানুষের শরীরে সবথেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গুলির মধ্যে প্রথম স্থানে আছে। এছাড়াও বিভিন্ন তরল খাবার সম্ভব হলে দুধ, স্যুপ, ফলের রস, রসাল ফল ও পানিসমৃদ্ধ সবজি খেতে পারেন।
২। শাকসবজি হোক নিত্য দিনের সঙ্গীঃ
প্রতিদিন গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসবজি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। শাস সবজি দেহে আয়রন ও ভিটামিনের গুরুত্বপুর্ন উৎস বলে বিবেচিত। তাই বুকের দুধের প্রবাহ ঠিক রাখতে ভাতের সাথে শাক সবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। উদ্ধিজ্য আমিষ হিসেবে খাদ্য তালিকায় সবুজ ও রঙিন শাকসবজির কোন বিকল্প নেই।
৩। প্রোটিন ক্যালসিয়ামের কোন বিকল্প নেইঃ
স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার হিসেবে দৈনন্দিন প্রোটিন ও ক্যালসিয়া জাতীয় খাবারের কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিনই ডিম, মাছ, মাংস, ডাল বা ডালজাতীয় খাবার খেতে হবে। ঘন ডাল, নানা রকম বীজ ও বাদাম খাওয়া ভালো। মুগ ডাল খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। এতে প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম এবং বি–ভিটামিনগুলো ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে।
৪। আয়োডিন আর ভিটামিন হোক মা ও শিশুর জন্যঃ
আপনার ছোট সোনামনির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে আপনার মাধ্যমেই শিশু পাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য। মা ও শিশু উভয়ের শরীরে ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকবেন। অবুঝ শিশু সন্তানের জন্য দুধের উৎপাদনে ভিটামিন ডি ভুমিকা রাখে।
৫। ফলমুল থাকুক প্রতিদিনের খাদ্যাভাসেঃ
আমাদের পুর্ববতর্তী আলোচনা থেকে আপনি হয়তো ধারনা পেয়েছেন ফলমুল একজন গর্ভবতী মা এবং সদ্য সন্তান প্রসবকারী স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য কত গুরুত্বপুর্ন। প্রয়োজনমতো মৌসুমী ফল অবশ্যই খাবেন। ফল যেমন ভিটামিনের উৎস তেমনি দুধের উৎপাদন ও প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, আয়রন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ করে থাকে ফলমুল। আনারস, আনার, তরমুজ, নাশপাতি, পেঁপে ও অন্যান্য রসাল ফল বেছে নেওয়া ভালো। খানিকটা অ্যাভোকাডোও খাওয়া যায়। মৌসুমি ফল ও টক ফল দারুণ উপকারী। স্তন্যদাত্রী মা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন। পর্যাপ্ত তরল খাবার, আঁশযুক্ত ফলমূল (যেমন নাশপাতি, আম, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি) এবং প্রচুর শাকসবজি খেলে কোষ্টকাঠিন্যের ঝুঁকি কমে।
৬। খেতে হবে প্রানিজ আমিষঃ
মাঝারি আকারের মাছ ও এর তেল এবং মাঝারি আকারের মুরগির মাংস খাওয়া ভালো কেননা এর পুষ্টিগুন গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে স্তন্যদানকারী মা সবার জন্যেই খুবই কার্যকরী। রোজ একটি ডিম খেলে তা আপনার জন্য অধিক উপকারী হবে। সপ্তাহে দুই দিন কলিজা খেলে আয়রনের চাহিদা মিটবে। উদ্ভিজ্জ উৎসের চেয়ে প্রাণিজ উৎসের (কলিজা) আয়রন বেশি কার্যকরভাবে দেহে শোষিত হয়। ডুবোতেলে ভাজা খাবারও খাওয়া যাবে। সয়াবিন তেল, তিসির তেল, অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল, শর্ষের তেল খাওয়া ভালো।
পরিশেষে বলা যায়, মা সুস্থ থাকা সন্তান সুস্থ্য থাকার জন্য গুরুত্বপুর্ন। সুস্থ মা সবল শিশু। স্তন্যদানকারী মায়ের উচিৎ উপরে উল্লেখিত খাবার সমুহ অধিক পরিমানে গ্রহন করা যাতে বুকের দুধ উৎপাদনের প্রবাহ ভাল থাকে এবং সন্তান সঠিক পরিমানে মাতৃদুগ্ধ পান করতে সক্ষম হয়। প্রয়োজনে নিকটস্ত ক্লিনিক অথবা গাইনি, নবজাতক এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে পারেন। সুস্থ থাক প্রতিটি শিশু। সকল স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যই শুভকামনা থাকলো।