প্রত্যেক বিবাহিত দম্পতিই চায় তাদের জীবনে সন্তান আসুক। সাংসারিক দাম্পত্য জীবন পূর্ণতা পায় যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক নতুন জীবন আসার ইঙ্গিত দেয়। নিজেদের সমস্ত ভালোবাসা এবং সামর্থ্য উজাড় করে সেই সন্তান বড় করে তোলা যে কোন স্বামী-স্ত্রীর প্রধান দায়িত্ব হয়ে পড়ে। নিজেদের সমস্ত চাওয়া পাওয়া, স্বপ্ন সব কিছু তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। অনেক সময়ই সুন্দর এই চাওয়ায় নানাবিধ বাধা আসে। ব্যাঘাত ঘটে সন্তান আগমনে। স্বামী স্ত্রী বা উভয়ের মধ্যেই বাসা বাধে বন্ধ্যাত্ব নামক এক যাতনা। আপনারা আমার লেখা পরে হয়তো ইতিপুর্বেই জেনেছেন বন্ধ্যাত্ব কি? কেন মানুষ বন্ধ্যাত্ব নামক জটিল চক্রে আটকে যায়? কেনইবা বন্ধ্যাত্ব আমাদের জীবনে মারাত্বক প্রভাব ফেলে। বন্ধ্যাত্ব নামক জটিলতা যেমন মানুষের জীবনে স্বাভাবিক ঠিক তেমনি ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার এর কিছু উপায় ও রয়েছে যা আপনার এই জটিলতা থেকে মুক্তিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো কিভাবে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার করা যায়।
বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক যে কোনো পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসক Dr. MD Rafiqul Islam Bhuiyan স্যার এর সাথে
যে ৬ সহজ নিয়ম মেনে চলে মুক্তি পাবেন বন্ধ্যাত্ব থেকে-
১। সঠিক খাদ্যাভাসঃ
খাদ্যাভাস বা দৈনন্দিনকার খাওয়া দাওয়ার যে চিরায়ত অভ্যাস সেটিতে আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন।প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার করতে হলে খাওয়াদাওয়ায় নারী পুরুষ উভয়েরই পষ্টিকর সেসব খাবার খেতে হবে যেখানে পুষ্টির পাশাপাশি এমন সব খাদ্য উপাদান আছে যা, পুরুষের শুক্রানু বৃদ্ধি ও ঘন করতে সহায়তা করে এবং নারীর জরায়ুর উর্বরতায় গুরুত্বপুর্ন।
২। ক্ষতিকারক উপাদান বর্জনঃ
আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার করতে চান তবে সবার আগে আপনাকে ক্ষতিকারন উপদানসমুহ বর্জন করতে হবে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। আপনার অতিরিক্ত ধুমপান বা মাদক দ্রব্য গ্রহনের মতো অভ্যাস থেকে থাকলে আজই বিদায় বলুন এসব বদ অভ্যাসকে। অতিরিক্ত ধুমপানে আপনার স্বাভাবিক যৌন শক্তি অস্বাভাবিক রকম দুর্বল হয়ে পরে। মাদক গ্রহনের ফলে নারীর ডিম্বানুর সুষ্ঠ বিকাশে নানাবিধ বাধা সৃষ্টি করে থাকে। প্রায় সকল বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ চিকিসকরা একমত যে প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার করতে হলে মাদকদ্রব্য গ্রহন, স্বাস্থ্য হানিকর যে কোন কিছু থেকেই বিরত থাকতে হবে। শারীরিক এবং মানুসিক ভাবে দুর্বলতার সৃষ্টি করে এমন সকল কিছুই বর্জন করতে হবে।
৩। শরীর চর্চাঃ
যদি সুস্থ্য থাকতে চান, নিয়ম মেনে শরীর চর্চায় নিয়মতান্ত্রিক মনোনিবেশ করুন। শরীর চর্চার অনেক উপকারিতা রয়েছে। শরীর চর্চা প্রত্যেক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। স্বাস্থ্য রক্ষা করে। শরীরের বিভিন্ন কোষ সমুহকে সক্রিয়ক করে তোলে। মানুষের শরীর ও হাড়ের জোড়াকে মজবুত করে। শরীর চর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি শরীর ও মনে নানারকম প্রফুল্লতা সৃষ্টি করে। অলসতা, ক্লান্তি অপসারণ করে। নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম কর্মস্পৃহা বাড়ায়। শরীর চর্চার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়। ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালী সচল থাকে। এতে করে পুরো শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত শরীর চর্চা সুনিদ্রা আনয়ন করে। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য শরীর চর্চা অত্যন্ত উপকারী। শরীর চর্চা অনিদ্রা দূর করে। এর মাধ্যমে শরীরের রোগ দূরীভূত হয়। ফলে শরীর শক্তিশালী ও সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার এর চিন্তা যদি আপনি করে থাকেন এক্ষেত্রে শরীর চর্চাকে সর্বাজ্ঞে প্রাধান্য দিতেই হবে।
৪। জীবন যাত্রায় পরিবর্তনঃ
স্থলতা সন্তান ধারণের অন্তরায়। প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার করতে হলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাতে আগে ঘুমানো, সকালে আগে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আপনার জন্য হতে পারে একটি অত্যান্ত ভাল দাওয়াই। কারন ধর্মীয় সচেতনা আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আনবে গতি। নিয়মত্রান্ত্রিক জীবন পরিচালনা প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার এর একটি গুরুত্বপুর্ন পাথেয়।
৫। মানসিক দৃরতা ও আত্মবিশ্বাসঃ
আপনি যদি মানসিক ভাবে দৃরতা অর্জন করতে না পারেন তবে কখনোই প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার করতে পারবেন না। বন্ধ্যাত্ব যতটানা শারিরিক সমস্যা তার চেয়ে আরো বেশি মানসিক। আপনি যদি কখনো হাল ছেড়ে না দেন তবে আপনি আবশ্যই একদিন না একদিন সফল হবেনই। কিন্তু যখন আপনি হাল ছেড়ে দিবেন তখন সফলাতার আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা। নিজের উপর শতভাগ আস্থা রাখুন। আজ না হয় কাল আপনি সন্তানের পিতা বা মাতা হবেন ই। জীবন নিয়ে কোন ধরনের হতাশাকে প্রশ্রয় দিবেন না। মনে রাখবেন আপনার মানসিক শক্তি ও প্রবল আত্মবিশ্বাস আপনার মস্তিস্কে একটা সুন্দর বার্তা দিবে, যা মস্তিস্ক থেকে দেহের প্রতিটা অঙ্গে ছড়িয়ে যাবে যে, আপনি সন্তান জন্মদানে সক্ষম। প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার এর ক্ষেত্রে মানসিক দৃরতা ও আত্মবিশ্বাস সবচেয়ে বেশি জরুরি।
৬। দাম্পত্বে আস্থা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাঃ
সাধারনত মেয়েদের মাসিক চক্রের মাঝে নির্দিষ্ট কিছু সময় থাকে যে সময়টাতে সহবাস করলে সন্তান জন্মদানের হার অনেক বেশি থাকে। যে সমস্ত দম্পতি বন্ধ্যাত্ব নামক ব্যাধিতে ভুগছেন তাদের জন্য গরুত্বপুর্ন হলো সেই সময়কাল নিধারন করে সহবাস করা। তবে এই কথাটি বলার মূল কারন হলো, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকদিন মিলন করে অন্য সময় গ্যাপ দিলে অনেক সময়ই ডিম্বানু নিষেক না হতে পারে এজন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে নিয়মিত সহবাস গুরুত্বপুর্ন। আপনি যখন নিয়মিত সহবাস করবেন তখন উভয়েরই শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকবে এবং
প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার তথা ভাল ফলাফল পেতে তা সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। পরস্পরের প্রতি আস্থা রাখুন। যদি জানেন যে আপনার সঙ্গীর সমস্যার কারনে আপনি সন্তান জন্মদানে সফল হতে পারছেন না তবুও তার প্রতি আস্থা রাখুন। দাম্পত্বে আস্থার প্রতিফল হিসেবে দ্রুততম সময়েই হয়তো আপনার প্রচেষ্টা অব্যবহত রাখার ফল স্বরুপ প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার এর মাধ্যমে আপনি বহুল আকাঙ্খিত সেই প্রতিক্ষিত ডাক সুনতে পাবেন ইনশাআল্লাহ্।
তাই পরিশেষে বলা যায় যে, বন্ধ্যাত্ব আর ৫ টা রোগের মতই একটি সমস্যা। এটি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে প্রাকৃতিক উপায়ে বন্ধ্যাত্ব পরিহার এর নিয়ম সমুহ মেনে চলতে পারেন এবং অবশ্যই ইনফার্টিলিটি(বন্ধ্যাত্ব) বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। সঠিক চিকিৎসা এবং সুস্থ্য দেহ ও মন আপনার বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে কার্যকর ভুমিকা রাখবে। হতাশাকে দুরে ঠেলে নতুন ভোর আসবেই আসবে।