গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া প্রত্যেক মানুষের জন্য খুব দরকারি। শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য খাদ্যের বিকল্প নেই। সব খাবারে এক রকম পুষ্টিগুন এবং খাদ্যপ্রান থাকে না। শরীর গঠনের জন্য পুষ্টিকর সুষম খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিগুন বিবেচনা করে খাবার গ্রহন আরো বেশি জরুরী। এই সময় খাবারের মঝে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন থাকতে হবে যা থেকে গর্ভের সন্তান পর্যাপ্ত পুষ্টি, মিনারেল এবং ভিটামিন পেয়ে থাকে। তবে প্রায় সময়ই গর্ভবতী মায়েরা না বুঝে বা সঠিক ধারনার অভাবে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে ফেলি যা গর্ভের সন্তান এবং মা উভয়ের জন্যই নানাবিধ ক্ষতির কারন হয়ে থাকে। কিছু কিছু খাবার আছে যা গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার বলে বিবেচিত হয়। এসব খাবারে পুষ্টিগুন থাকলেও তা গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।
আজকে আমরা এমনি কয়েকটি খাবার নিয়ে আলোচনা করবো। এসব খাবার স্বাভাবিক সময়য়ে খুবই উপকারি হলেও গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের জন্য খাওয়া অত্যান্ত ঝুকিপুর্ন বলে বিবেচিত।
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবারঃ
গর্ভবতী মা যে খাবার ই গ্রহন করুক না কেন আমাদের মনে রাখতে হবে কোন খাবার তার ও তার অনাগত সন্তানের জন্য কতটুকু উপকারি বা ক্ষতিকর। খাদ্য ও তার কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের কিছু ভুল ধারনার কারনে আপনার অনাগত সন্তান নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই আর্টিকেলটি সঠিক মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং জেনে নিন এই খাবার আপনার গর্ভবতী স্ত্রী বা গর্ভবতী সন্তানসম্ভবা মা খাচ্ছে কিনা?
গর্ভাবস্থায় যা খাওয়া ঝুকিপুর্নঃ
কাঁচা মাছ ও সিফুড
সাধারনত কাঁচা মাছ ও বিভিন্ন ধরনের সি ফুড খাদ্য হিসেবে উপকারি। এসকল খাবারে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম প্রচুর থাকে। তবে যদি গর্ভবতী মায়ের কথা চিন্তা করেন তবে এড়িয়ে যেতে হবে এসব কাঁচা মাস তথা বিভিন্ন ধরনের সিফুড। কারণ এগুলোতে উচ্চমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকতে পারে। আর এসব পরজীবি আপনার ও আপনার অনাগত সন্তানের জন্য ক্ষতির কারন বয়ে আনতে পারে।
রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিম
কাঁচা মূলা, শিম ও আলফালফার বীজ এবং রেডি-টু-ইট সালাদ সহ এই ধরনের খাবার খাওয়া থেকে গর্ভবতী নারীর অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এসব খাবার হয়তো মজাদার বা ক্ষেত্র বিশেষে পুষ্টিকরও বটে কিন্তু এসব খাবার গুলোতে লিসটেরিয়া, সালমোনিলা ও ই. কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। সুস্থ মানুষের জন্য ক্ষতির কারন না হলেও গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার হিসেবে এসব খাবারকে চিকিৎসকরা চিহ্নিত করে থাকেন।
অপাস্তুরিত দুধ
যদি প্রথমে এই “অপাস্তুরিত দুধ” শব্দটা শুনেন তাহলে হয়তো ভাববেন,এটা আবার কেমন দুধ। আসলে অপাস্তুরিত দুধ বলতে কাচা দুধ কে বোঝানো হয়। আমাদের মধ্যে একটা ধারনা যুগ যুগ ধরে কুসংস্কারের মতো চলে আসছে যে, কাচা বা আগুনে না জাল দিয়ে দুধ খাওয়ালে বাচ্চা এবং মায়ের জন্য ভালো। এটি একটি সম্পুর্ন ভুল ধারনা। অনেক ক্ষেত্রেই এই অপাস্তুরিত দুধ আপনার বাচ্চার জন্য এমন কি আপনার জন্য ক্ষতির কারন হয়ে থাকে। বিজ্ঞানিদের মতে, দুধ কে পাস্তুরিত করাই হয় এই জন্য যাতে দুধের ভেতর থাকা জীবাণু গুলো ধ্বংস হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সহজেই অনুমেয় যে, যদি আপনি এই কাচা দুধ সরাসরি পান করেন তবে কিন্তু সেই সকল জীবাণু দুধে রয়েই গেল। সুতরাং, অপাস্তুরিত দুধ থেকে বিরত থাকবেন। বিশেষত গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার হিসেবে অপাস্তুরিত দুধকে চিহ্নিত করা হয়।
কাচা ডিম
ডিম সর্বদাই একটি পুষ্টিকর খাবার। কাচাডিমেও পুষ্টি রয়েছে। তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য কাচাডিম খাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। কাচা ডিম শুধু নয় কাচা ডিমের তৈরি করা খাবার যেমন মেয়োনিস হতে শুরু করে কাস্টারড খাওয়াও গর্ভাবস্থায় ঝুকিপুর্ন। হ্যাঁ, যদি সেই ডিম রান্না করা হয় অথবা ভালো ভাবে ভাজি করা থাকে তাহলে সমস্যা নেই। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় কাচা ডিম কাচা ডিম না খাওয়ার অনেক গুলি কারনের মধ্যে একটি হলো কাচা ডিম থেকে সাল্মনেল্লা নামক রোগের একটি সম্ভাবনা থাকে যা গর্ভাবস্থায় দেখা যায়। তাই এই সময় কাচা ডিম খাওয়া ও ডিমের তৈরি থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবেন।
শেষ কথা
একজন গর্ভবতী মা এক দেহে দুটি প্রান ধারন করে থাকেন। তাই আমাদের সকলের উচিত গর্ভবতী মায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, একজন নারীর গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত সময় তার জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময়। এই সময়ে সামান্য বেখায়ালি বা অল্প একটু ভুল অনাগত সন্তান তথা নিজের বিপদের বড় কারন হয়ে দাড়ায়। আবার সঠিক যত্ন সুষম খাবার মা এবং সন্তানকে সুস্থ রাখার পুর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে।
এই সময়টিতে পুষ্টিকর খাবার ও ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, খাদ্যপ্রান যেমন প্রয়োজন তেমনি মায়ের জন্য ও গর্ভের অনাগত বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারন যেসব খাবার তা থেকে বিরত থাকাও সমান গুরুত্বপুর্ন। সুস্থ থাকুন সকল গর্ভবতী মা। আগমন হোক সুস্থ সন্তান। সকলের জন্য ডাঃ মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম ভুইয়ার পক্ষ থেকে সুভকামনা। বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে যে কোন পরামর্শ অথবা সহযোগীতা পেতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।