টেস্টোস্টেরন হরমোন হচ্ছে স্টেরয়েড হরমোন যা পুরুষদের জন্য পেশি দৃঢ়তা ও বলবৃৃদ্ধির উপায়। এই হরমোন পুরুষের জনন ক্ষমতা ও বাড়াতে সহায়তা করে। ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এসে প্রতি ১% করে হ্রাস পায়।তবে গবেষণায় জানা গেছে একজন পুরুষের ৭০ বছর হলে তার টেস্টোস্টেরন হরমোন অর্ধেক হয়ে যায়। তবে আপনার কি ধারণা শুধু পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে?এই বিষয়ে তাহলে সংক্ষিপ্ত বর্ননা দেয়া যাক।
মেয়েদের শরীরে ও অল্প পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে তবে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের আধিক্য বেশি দেখা যায়। মেয়েদের যখন হরমোন বেশি দেখা দেয় তখন শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ বিরাজ করে। ত্বকে কালো ভাব,বগল ও গাড়ে কালচে দাগ হওয়া,ওজন বৃদ্ধি, টাইপ ২ ডায়াবেটিস সহ ক্যান্সারের মতো ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া মেয়েদের একটি পরিচিত সমস্যা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও টেস্টেস্টেরন হরমোন এর জন্য দায়ী।পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম সাধারণত ৩০% মানুষের মধ্যেই এখন বিরাজমান। এর ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট সহ অনিয়মিত ঋতুচক্রের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাহলে এই অবস্থায় বলা যায়, মেয়েদের শরীরে ও টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাব রয়েছে।
কিছু খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ও বৈশিষ্ট্য যথা ভাজাপোড়া, উচ্চ প্রোটিন এবং কম চর্বিযুক্ত খাবারে রয়েছে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির ঝুঁকি। তাই সঠিক চিকিৎসা এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তনে সম্ভব টেস্টোস্টেরন হরমোন নিয়ন্ত্রন রাখা।
৫ খাবার যা শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ায়
১. চর্বিযুক্ত মাছ ও ডিমঃ
সাধারণত আমরা আমাদের খাবার মেনুতে প্রতিদিন মাছ অথবা মাংস রাখতে পছন্দ করি। তখন চর্বিযুক্ত মাছ তথা রুই,কাতল সহ তেলযুক্ত মাছ খাবার ডায়েটে যুক্ত করতে হবে। এতে আপনার শরীরের সব ঠিকঠাক কার্যক্রম চলতে থাকবে পাশাপাশি টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ হওয়া শুরু করবে। টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ হওয়ার জন্য চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া উত্তম।এতে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা টেস্টোস্টেরন ক্ষরণে সহয়তা করে।
এবার ডিমের ভূমিকা নিয়ে কথা বলা যায়। ডিমে থাকে প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো অ্যাসিড সহ ভিটামিন ডি।এর ফলে শরীরের চাহিদার ঘাটতি কমে এবং প্রচুর পরিমানে আমিষের পূরণ করতে ডিম অত্যন্ত কার্যকারী উপায়।টেস্টোস্টেরনকে উদ্দীপ্ত করার পাশাপাশি ক্ষরণে বিশেষ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
সতর্কতাঃ তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সহ হার্টের সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের পরমার্শ নিয়ে তারপর চর্বিযুক্ত মাছ ও ডিম গ্রগ্রহণ করবেন।
২. উদ্ভিজ দুধঃ
দুধ বরাবরই একটি সুষম খাদ্য হিসাবে আমরা চিনি।এতে রয়েছে ভিটামিন ডি সহ খনিজ লবন এবং শরীরের পুষ্টি সরবরাহ জন্য বিশেষ পুষ্টিগুণ।অনেকের ল্যাকটোজ অ্যালার্জি থাকে বিধায় খাদ্য তালিকায় দুধ বাছাই করতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।এক্ষেত্রে আপনি আমন্ড, ওটসের দুধ পরিমিত গ্রহণ করে শরীরের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। সুতরাং আপনি দুধেই পাবেন ক্যালিয়াম এবং ভিটামিন বি-১২ যা রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে। প্রতিদিন তাই খাদ্য তালিকায় আদর্শ সুষম খাদ্য হিসাবে দুধ অনবদ্য যা প্রকৃতি থেকে শতভাগে পাওয়া যায়।
সতর্কতাঃ আপনার যদি বেশি পরিমানে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি থাকে এবং ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট না হয়ে থাকেন তবে প্রানিজ দুধ বাছাই করতে পারেন।
৩.সবুজ শাকসবজিঃ
সবুজ শাকসবজি খেতে অনেকেই অপছন্দ করেন তবে বিশেষ নজরদৃষ্টিতে জানা গেছে, এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম সহ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা টেস্টোস্টেরন ক্ষরণে সহায়তা করে থাকে। তাই খাবার তালিকায় অবশ্যই পালংশাক সহ যত সবুজ শাক পাবেন অন্তত প্রতিদিন একটা আইটেম হলেও রাখার চেষ্টা করবেন।
সতর্কতাঃ যারা সবুজ শাকসবজি অপছন্দ করেন তারা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার যেমন পাকোড়া, সবজির স্যুপ সহ প্রভৃতি স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করে নিবেন।
৪.বেরি জাতীয় ফলঃ
বেরি জাতীয় ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং শরীরের জন্য উপকারী পুষ্টি যোগানোর সক্ষমতা যা একই সাথে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণে ও সহায়তা করে। তাই বেরি জাতীয় ফলের কারনে আপনি যে কোন কাজ স্ফূর্তিতে ও চিন্তা ব্যতীত করতে পারবেন।
সতর্কতাঃ অতিরিক্ত বেরি জাতীয় ফল খেলে আপনার শরীরে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাছাড়া হজমে সমস্যা সহ থাকতে পারে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা। তাই পরিমিত উপায়ে ফল গ্রহণ করুন।
৫.ডার্ক চকোলেটঃ
ডার্ক চকোলেটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোকো নামক এক উপাদান থেকে আসে।এই কোকো সাধারণত ডার্ক চকোলেট থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া এতে রয়েছে মানসিক চাপ সহ দুশ্চিন্তা দূর করার উপায়।তাই আপনারা ডার্ক চকোলেট খেয়ে ও উপকার পেতে পারেন।এক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ বৃদ্ধি পাবে।
সতর্কতাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে চকোলেট গ্রহণে আপনার ওজন বাড়ার পাশাপাশি সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।তাই ডাক্তারের পরমার্শ অনুযায়ী পরিমিত খাবার নিলেই এই যাত্রায় বাঁচা সম্ভব।
অন্যান্য
এছাড়া আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল যা আপনার টেস্টোস্টেরনের ক্ষমতা বাড়াবে। বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার হরমোন ক্ষরনে সহায়ক।নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কলা হতে পারে সবচেয়ে সহজ ও বিকল্প চিন্তা। কলায় রয়েছে এমন সব উপাদান যা শরীরের পুষ্টি সহ হরমোন ক্ষরণে অতীব জরুরি।
পরিশেষে বলা যায় – সঠিক চিকিৎসা ও খাবার নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অবস্থা মোকাবিলা করতে পারেন তথাকথিত বন্ধ্যাত্ব যা মনে করা হয় শুধু নারীদের জন্য প্রযোজন্য কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল একটি ধারণা। পুরুষদের অবহেলার কারনে তাদের এই মারাত্মক সমস্যায় সম্মুখীন হতে হয়।তাই আপনার হরমোনের লেভেল ও মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে লাইফস্টাইল ও খাবার নির্বাচনে আরো সতর্ক হয়ে উঠুন।