বেঁচে থাকতে হলে প্রতিটি প্রানীরই খাদ্য প্রয়োজন। খাবার গ্রহন করা ব্যাতিত কোন প্রানী বাঁচতে পারেনা। প্রতিটি প্রানীই খবার গ্রহন করে। এই খাবারের মধ্যে আবার প্রকারভেদ রয়েছে। সব খাবারে এক সমান পুষ্টিগুন নেই। পুষ্টিকর খাবারের তালিকা অনুসরন করলে স্বাভাবিক মাত্রায় খাবার গ্রহনেও অধিক মাত্রায় খাদ্যপ্রান ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। কোন কোন খাবার পরিমানে অল্প গ্রহন করলেও অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। আবার কিছু খাবার আছে যা ক্ষুদা নিবারন করলেও পুষ্টিগুন তুলনামুলক কম। খাদ্য বলতে আমরা যদি এর সঙ্গা বিশ্লেষন করি তবে বলা যায়, আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য আমরা যা খেয়ে থাকি তাকেই খাদ্য বলে। তবে খাবার শব্দের ব্যাপ্তি অনেক বড়। শুধুমাত্র উদরপুর্তিতে যা সিমাবদ্ধ না। আরো গভীরভাবে বললে, যে উপাদান গ্রহনের ফলে আমাদের শারীরিক ও মানষিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তাকে খাদ্য বলে চিহ্নিত করা যায়। খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে পুষ্টিগুন বিবেচনা করা অপরিহার্য।
পুষ্টিঃ পুষ্টি বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়, যার মাধ্যমে আমাদের শরীর খাদ্য গ্রহণ করে, অতঃপর পরিপাক করে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান শোষণ করার দ্বারা শরীরে কাজ করার শক্তির যোগান দেয়। পুষ্টি আমাদের দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিসাধন করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে অভাবনীয় ভুমিকা রাখে। এককথায় যদি বলি, পুষ্টি বলতে স্বাস্থ্যকর আদর্শ খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের দেহে যে পরিবর্তন বা ভাল ফলাফল প্রকাশ পেয়ে থাকে তাকে বোঝায়।
এখন প্রশ্ন হলো পুষ্টিকর খাবারের তালিকা কেমন হতে পারে? আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাই বা কেমন হওয়া উচিৎ?
খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন গবেষনালব্দ ফলাফলের ভিক্তিতে প্রতিদিনের খাবার তালিকে যেমন হওয়া উচিৎ তার একটি পুষ্টিকর খাবারের তালিকা নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে।
অবশ্যই পুর্ন আর্টিকেলটি পড়ে আপনার জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানাবেন।
দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকাঃ
প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবারের তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। মানুষের পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী কোন খাবার কতটুকু গ্রহণ করতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- ১। চাল, আটা, ভুট্টা ও দানাদার খাবারঃ পুষ্টিবিদদের বর্ননা অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ২৭০ থেকে ৪৫০ গ্রাম চাল, আটা, ভুট্টা গ্রহণ করা উচিত। এই খাদ্য তার দেহের স্বাভাবিক গঠনে ব্যাপক প্রভাব রাখে। সর্বদা একটি জিনিস খেয়াল রাখা জরুরি যে, ক্ষুধা নিবারনের জন্যই শুধু এসব খাবার গ্রহন করা হয়না। এসব খাবারে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও রয়েছে যা দেহের জন্য অতিব গুরুত্বপুর্ন।
- ২। শাকসবজিঃ ছোটবেলায় একটা কবিতা সবাই পরেছি, ভাত আর ডাল খেতে খুব ভাল লাগে, লালশাক পাতে তুলে দাও তার আগে। আসলে মানুষের দেহের জন্য শাকসবজির গুরুত্ব লিখে প্রকাশ করার মতো নয়। প্রতিটি মানষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি আবশ্যকীয়। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যাক্তির দিনে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম শাক সবজি খাওয়া জরুরি।
- ৩। প্রানিজ আমিষঃ মাস মাংস ডিম খাবার হিসেবে অতুলনীয়। অন্য কোন খাবারই এই সকল প্রানীজ আমিষের বিকল্প হতে পারেনা। দৈনিক খাদ্য তালিকায় অন্তত ১৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম মাছ, মাংস, ডিম রাখুন।
- ৪। তেল ও চর্বি জাতীয় খাবারঃ আপনার খাদ্য তালিকায় চর্বি জাতীয় খাবার কম রাখুন। তবে স্বাভাবিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিলি লিটার তেল ও চর্বি খাদ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করুন।
- ৫। ডাল জাতীয় খাবারঃ ডাল মানুষের শরীরের বিভিন্ন খাদ্য উপকরনের ঘাটতি পুরনে সহায়ক। প্রতি বেলাতেই খাবারের সাথে রাখতে পারেন ডাল। ডালের উপকারিতা বর্ননাতীত। সুষম খাদ্য হিসেবে ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম ডাল জাতীয় খাদ্য পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় রাখুন।
- ৬। দুধঃ দুধ এমন এক ধরনের খাবার যাতে প্রায় সকল খাদ্য উপাদান নিহীত। দুধ সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। আপনার শরীরের ও মনের স্বাভাবিক বিকাশ ও সুস্থতায় দুধের কোন বিকল্প নেই। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের পুষ্টিকর খাবারের তালিকা হিসেবে দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার দৈনিক ১৫০ থেকে ৪৫০ মিলি অবশ্যই রাখার চেষ্টা করুন। কথা দিচ্ছি অপচয় হবে না। বছরের বেশির ভাগ সময় যে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় সেই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান পাবেন আশা করছি।
- ৭। ফলমূলঃ ফলমুলে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি রয়েছে। প্রতিদিনের পুষ্টিকর খাবারের তালিকা তৈরি করতে হলে ফলমূলকে প্রাধান্য দিয়েই তালিকা করতে হবে। ভিটামিনের অন্যতম উৎস ফলমূল। প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ফল খাবার হিসেবে গ্রহন করা উচিৎ। আপনার পরিবারের সুস্থতার স্বার্থে যা আবশ্যকীয় বলে পুষ্টিবিদগন মনে করেন।
- ৮। সুগারঃ আমরা বেশির ভাগ সময়েই চিনি খাওয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রনের বানী শোনাই। এটাই সত্য। যতটুকু সম্ভব চিনি এড়িয়ে চলুন। সুস্থতার জন্য দৈনিক ১৫ – ২৫ গ্রাম চিনিই যথেষ্ট। ক্ষেত্র বিশেষ কম বেশি হতে পারে তবে অবশ্য নিয়ন্ত্রন জরুরি।
পরিশেষে বলা যায়, আমরা যদি এই পদ্ধতি প্রয়োগ করি তবে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দুপুরের খাবার হিসেবে পুষ্টিকর খাবারের তালিকা তৈরিতে, ৪০০ গ্রাম ভাত ( ৫৩%), ২০০ গ্রাম মিশ্রিত সবজি (১৫%), ৫০ গ্রাম মাছ, মাংস, ডিম (৬%), ১০০ গ্রাম শাক (১৫%), ২০ গ্রাম ডাল (৪%) এবং ৫০ গ্রাম মৌসুমী ফল (৭%) থাকা উচিত।
সর্বদা মনে রাখবেন, সুস্থতা আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নিয়ামত। পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের ফলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেকাংশেই সুস্থতা অর্জন সম্ভব। বিশেষ প্রয়োজনে নিকটস্ত যে কোন পুষ্টিবিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আর বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক যে কোন সমস্যায় আপনাদের পাশে আছে ডাঃ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া।