বন্ধ্যাত্ব! অনেক ছোট একটা শব্দ। একটা পরিবারের সুখ শান্তি নষ্ট করে হতাশায় ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য যা যথেষ্ট। কোন দম্পতির উভয় বা যে কোন একজন যদি বন্ধ্যাত্ব নামক সমস্যায় ভুগে তবে সেই সংসার আর আনন্দে থাকেনা বরং প্রতিনিয়ত সন্তান না পাওয়ার বেদনায় অশ্রু হয়ে ঝড়ে। নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, পুরুষের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে ততটা আলোচনা হয়না। সমাজ মনে করে সন্তান না হওয়ার পেছনে শুধু নারী ই দায়ী। আসলে এখানে আমাদের চিন্তা চেতনার অদক্ষতাকেই প্রকাশ পায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আলোচনা না হওয়ায়, পুরুষের বন্ধ্যাত্ব আড়ালেই থেকে যায়। সঠিক চিকিৎসা গ্রহন ও তুলনামুলক কম।
চলুন গবেষকদের গবেষনালব্দ ফলাফল এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা করা যাক, পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করার উপায়।
যেভাবে দুর হতে পারে পুরুষের বন্ধ্যাত্বঃ
১। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক পদ্ধতি।
- চিকিৎসা ও ঔষধঃ পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দুর করার ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবনের বিকল্প নেই। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহন আপনাকে বন্ধ্যাত্ব নামক অভিসাপ থেকে সহজেই মুক্তি দিতে পারে। বর্তমানে আধুনিক বিশ্ব তথা বাংলাদেশেও পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দুরিকরনে নানাবিধ চিকিৎসা বহুল প্রচলিত। সঠিক চিকিৎসা গ্রহনের পরে পরিমিত মাত্রায় ঔষধ সেবন আপনার মুখে হাসি ফুটাতে পারে।
- সার্জারীঃ সার্জারী বা অপারেশনের মাধ্যমে এমন সমস্যা দুর করা যায়, যে সমস্যার কারনে হয়তো আপনি বন্ধ্যাত্বের শিকার। উদাহরন স্বরুপ, ধরুন আপনার যৌনাঙ্গে এমন সংক্রমক হয়েছে যেটার কারনে আপনার যৌন জীবন ব্যহত হচ্ছে এবং আপনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। আবার বিভিন্ন ধরনের টিউমার বা এই ধরনের সমস্যা হতে পারে আপনার বীর্য থলিতে। যার কারনে আপনি বন্ধ্যা। আর এসব সমস্যা দুর করতে হলে সার্জারী খুবই গুরুত্বপুর্ন। নিঃসন্দেহে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে হলে কোন কোন ক্ষেত্রে সার্জারী সঠিক সমাধান নিয়ে আসে।
- সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তিঃ Assisted reproductive technology (ART) সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি পুরুষের বন্ধ্যাত্ব থেকে নিস্তার পেতে বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতি। স্বাভাবিক প্রজনন সম্পর্কিত সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য শরীরের বাইরে ডিম্বানু, শুক্রাণু, বা ভ্রূণকে পরিচালনা করা যে কোনও পদ্ধতি বা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি বা এআরটি বলা হয় । বন্ধ্যাত্ব দুর করনে বিভিন্ন ধরনের সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
in vitro fertilization (IVF)
intracytoplasmic sperm injection (ICSI)
পরবর্তিতে এসব ধরন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দুর করার উপায় হিসেবে সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি এখন নির্ভরযোগ্য প্রদ্ধতি। যদিও এটা কিছুটা ব্যায়বহুল তবে সফলতার হার ও বেড়ে চলছে বর্তমান সময়ে।
বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক যে কোনো পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসক Dr. MD Rafiqul Islam Bhuiyan স্যার এর সাথে
২। ঘরোয়া প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাঃ বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যাস্ত হতে হবে। সঠিক সময়ে আহার, সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম, অনিয়ন্ত্রিত বর্বব যৌন জীবন পরিহার পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দুর করতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে।
- স্ত্রীর মাসিক চক্র ও ডিম্বোস্ফোটন চক্র অনুযায়ী সঠিক সহবাসঃ আপনার স্ত্রীর মাসিক চক্র বিবেচনায় নিয়ে যে সময়টা ডিম্বানু নিষেকের উপযুক্ত সময় সেটা নির্ধারন করতে হবে। সঠিক উপায়ে সেই নির্দিষ্ট সময়গুলিতে অবশ্যই সহবাস করতে হবে। এই প্রদ্ধতির মাধ্যমে সহবাস সন্তান ধারনে ভুমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়ে থাকেন।
- খাদ্যাভাসে পরিবর্তনঃ জীবন পরিচালনায় খাবারের কোন বিকল্প নেই। আমরা অনেক সময় খাদ্য উপাদান বিবেচনা না করে খাবার গ্রহন করি। কিন্তু সন্তান ধারনের জন্য আপনাকে অবশ্যই খাদ্যভাসে স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। যে সকল খাবারে পুরুষের শুক্রানুর মান বৃদ্ধি পাবে এবং শুক্রানু উর্বর হয় সেই খাবার অতিব গুরুত্বপুর্ন। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দুর করতে হলে সঠিক খাদ্যাভাস জরুরী বলে মনে করেন বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক প্রায় সকল চিকিৎসকগন। তাই বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে খাদ্য তালিকা হিসেবে বাচ্চা হওয়ার জন্য কি কি খাবার বেশি বেশি খেতে হবে একবার চোখ বুলাতে পারেন। আশা করি উপকারে আসবে এই তালিকাটি।
- মানসিক দৃঢ়তাঃ মানসিক ভাবে আপনি যত শক্ত, আপনার বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি তত সহজ। আপনাকে নিয়মিত আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে সহবাস করতে হবে। কখনো হতাশাকে নিজের মধ্যে আনা যাবে না। আপনি পারবেন এই রকম আত্মবিশ্বাস যখন আপনার নিজের প্রতি হবে, তখন আপনি অতি সহজেই জড়তা কাটিয়ে উঠে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব থেকে নিস্তার পাবেন।
আমাদের সমাজে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আলোকপাত না হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এসম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখে না। যার ফলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হয় তা হলো, পুরুষ সঠিক চিকিৎসা পায়না। এমন ও দেখা যায়, স্ত্রীর একাধিক পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয়েছে তার কোন সমস্যা ধরা পরেনি। তবুও তারই পুনরায় চিকিৎসা হচ্ছে। অথচ সঠিক সময়ে স্বামীর সঠিক চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা গ্রহন হয়তো পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দুর করতে পারতো। তাই আমাদের উচিৎ বন্ধ্যাত্ব যার ই হোক না কেন, সঠিক চিকিৎসকের স্বরনাপন্য হয়ে পাথেয় গ্রহন করা। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব এমন কোন সমস্যা নয় যার নিরাময় সম্ভব নয়। উপরে উল্লেখিত বিষয় সমুহ মেনে চলা এবং বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহনে আপনি পেতে পারেন বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি এবং হতে পারেন সন্তানের পিতা।