কজন মেয়ের জন্য প্রতি মাসে কিছু সময় আসে যা অত্যান্ত স্পর্শকাতর সময় বলে বিবেচিত। এই সময়টি নারীর মাসিকের সময়। তখন মন ও শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন আসে। পৃথিবীর বেশিরভাগ নারী প্রতিমাসে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করেন। ব্যথাটি সাধারণত তলপেটে খিঁল ধরে থাকা ব্যথার মতো অনুভূত হয়। তলপেটের সাথে সাথে এটি পিঠ, উরু, পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পিরিয়ড চলাকালীন প্রায় পুরো সময়টা জুড়েই এ ব্যথা থাকে। তবে অনেক সময় এ ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং এর কারণে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।
মাসেকের সময় কোন কোন নারীর বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেকে আবার ডায়রিয়া এবং মাথাব্যথায়ও ভুগতে থাকতে পারেন। তবে পিরিয়ডের ব্যথা বিভিন্ন নারীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ও মাত্রায় হয়। আর সবার শরীরের একই জায়গায় ব্যথা হয় না এবং সবার ব্যথার তীব্রতাও একই রকম হয় না।
পিরিয়ডের সময় যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
ক্যাফেইনঃ কফি, চা, এবং কিছু সোডা পানীয় ক্যাফেইন সমৃদ্ধ, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়াতে পারে এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ ফাস্ট ফুড, কনফেকশনারি, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলোতে সোডিয়াম এবং চিনি বেশি থাকে। উচ্চ সোডিয়াম এবং চিনি, এগুলি ফুলে যাওয়া এবং মেজাজের পরিবর্তনকে আরও খারাপ করতে পারে।
চর্বিযুক্ত খাবারঃ ভারী এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো পেটের সমস্যা এবং bloating বাড়াতে পারে। ভাজা এবং চর্বিযুক্ত খাবার প্রদাহ এবং অস্বস্তি বাড়াতে পারে। মাসিকের সময়টাতে তাই সম্ভব হলে চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
এলকোহলঃ এলকোহল গ্রহণ করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে এবং পিরিয়ডের সময় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মিষ্টি খাবার ও সল্টযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার (যেমন কেক, পেস্ট্রি) খেলে রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়তে পারে, যা খারাপ মুড এবং ক্লান্তি আনতে পারে। অতিরিক্ত নুনযুক্ত খাবার (যেমন স্ন্যাকস) bloating বাড়াতে পারে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ কিছু নারীর ক্ষেত্রে, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার পিরিয়ডের সময় পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মাসিকের সময় যে সকল খাবার গ্রহন করতে পারেন।
লেবুর রস অত্যন্ত অম্লীয় একটি খাবার। পিরিয়ড এর যন্ত্রনা লাঘবের অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় উপায় হলো লেবুর রস খাওয়া। এছাড়াও, এর কোন নেতিবাচক স্বাস্থ্য প্রভাব নেই। বমি বমি ভাব, বমি এবং পেটের রিফ্লাক্স সম্পর্কিত অন্যান্য উপসর্গগুলি প্রতিরোধ করতে অল্প পরিমাণে লেবুর রস খান।
এছাড়াও পিরিয়ডের ব্যথায় আরাম পেতে কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন। এই সময় গরম পানি পান করলে জমাট বাঁধা রক্ত ভেঙে সহজে বের হয়ে যায়। ফলে ব্যথা কমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা শিথিল করতে কুসুম গরম পানি পানে উপকার পাওয়া যায়। গরম পানি শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকে সচল রাখে ও গিঁটে ব্যথাসহ শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করে।
পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। স্যানিটারি প্যাড (৪–৬) ঘণ্টা অন্তর পরিবর্তন করতে হবে। এ সময়ে হরমোনের প্রভাবে কিছুটা মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, তাই মানসিক চাপমুক্ত থেকে ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে আত্মবিশ্বাসের রেখে কাজ করতে হবে।
মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড বা মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করুন। কাপড়, তুলা বা টিস্যু ব্যবহার করবেন না। চার থেকে ছয় ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করুন। একসঙ্গে দুটি স্যানিটারি প্যাড পরবেন না।
নারীর মাসিকের সময় কিছু বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হলোঃ
- স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। আয়রন, ভিটামিন বি৬ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান।
- হাইজিন থাকুন ও ব্যথা মোকাবিলা করুনঃ মাসিক চলাকালীন হাইজিন মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। প্যাড বা ট্যাম্পন নিয়মিত পরিবর্তন করুন এবং পরিষ্কার থাকা নিশ্চিত করুন। পিরিয়ডের সময় ব্যথা হলে বিশ্রাম নিন। প্রয়োজনে গরম পানির ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন বা ডাক্তারি পরামর্শ নিতে পারেন।
- শারীরিক কার্যকলাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যঃ হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে পারেন। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং ব্যথা হ্রাসে সাহায্য করতে পারে। মাসিকের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মoods swings হতে পারে। ধৈর্য ধরুন এবং আপনার অনুভূতি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলুন।
- ডাক্তারের পরামর্শঃ: যদি পিরিয়ডের সময় অস্বাভাবিক ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা অন্যান্য সমস্যা হয়, তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- বিশ্রামঃ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং প্রয়োজন হলে নিজেকে সময় দিন।
এই বিষয়গুলো মেনে চললে মাসিকের সময় স্বস্তিতে থাকা সম্ভব।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, মাসিক মেয়েদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন এবং স্পর্শকাতর সময়। এই সময় উপরোক্ত বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিৎ। নানা রোগের আগমন ঘটতে পারে মাসিকের সময়ে। তাই নিজের যত্ন নিন। সঠিক সেবা গ্রহন করুন। ভারি কাজ থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন। মাসিকের সময়টাতে চেষ্টা করুন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে। ভাল থাকুন। সুস্থ্য থাকুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন। শুভকামনা থাকবে সকলের জন্য।
সফলতার গল্প
আপনি কি ঢাকার সেরা বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ খুঁজছেন? ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আইভিএফ ও বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ, যার ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ১০০টিরও বেশি সফল আইভিএফ সাফল্য রয়েছে।
গর্ভাবস্থা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের YouTube এবং Facebook পেজে ভিজিট করুন:
- YouTube: Infertility Solution by Dr. Rafiqul
- Facebook: Infertility Solution BD
সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা পেতে এবং আমাদের কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, এখানে ভিজিট করুন: Google Maps