শুরুতে একটি কথা বলে নেওয়া দরকার যে, আমাদের যেমন জ্বর হয়, বা বড় ধরনের রোগ হয় বন্ধ্যাত্ব ও ঠিক তেমনই একটি রোগ। প্রতিটি রোগ যেমন নিরাময় বা প্রতিরোধযোগ্য তেমনি বন্ধ্যাত্বও নিরাময় যোগ্য রোগ। আমাদের সমাজের কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসলে বন্ধ্যাত্ব নিরাময় করার অনেক উপায় সামনে আসবে। তবে সম্পর্কে স্বামী বন্ধ্যা হলে স্ত্রীর বা স্ত্রী বন্ধ্যা হলে স্বামীর বিশেষ কিছু করনীয় আছে। আমরা যদি এসব দিক বিবেচনায় নেই তবে বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা ও সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেই বিশেষজ্ঞগণ মত দিয়েছেন।
স্ত্রী বন্ধ্যা হলে স্বামীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই কিছু মূল বিষয় বোঝা দরকার। বন্ধ্যত্ব একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়, যা বিবাহিত জীবনের জন্য গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি মোকাবেলার উপায়গুলো জানলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১. প্রথমে বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে ধারনা নেওয়া এবং প্রকৃতি পর্যালোচনা করাঃ
স্বামীর উচিত প্রথমেই বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করা। বন্ধ্যত্ব বলতে সাধারণভাবে বোঝানো হয় যে, একটি দম্পতি এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার পরেও গর্ভধারণ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। বন্ধ্যত্বের কারণ বিভিন্ন হতে পারে এবং এটি শুধুমাত্র স্ত্রীর সমস্যা নয়, বরং পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তাই উভয়কে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো উচিত।
২. স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াঃ
স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে নিয়ে একজন গাইনোকোলজিস্ট বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। চিকিৎসক সাধারণত স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা, হরমোনাল সমস্যা, বা অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলোর পরীক্ষা করে বিষয়টির নির্ণয় করবেন। একইসঙ্গে স্বামীরও সেমেন অ্যানালিসিস করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণ চিহ্নিত করতে সহায়তা করে।
৩.স্ত্রীর প্রতি সর্বদা মানসিক সহানুভূতি এবং সমর্থন দেওয়াঃ
স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব একটি মানসিক চাপের বিষয় হতে পারে। স্বামীকে তার স্ত্রীর মানসিক অবস্থার প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত এবং তাকে সমর্থন দেওয়া উচিত। বন্ধ্যত্বের কারণে স্ত্রীর আত্মবিশ্বাস ও মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে, তাই স্বামীকে ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে হবে।
৪. চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ বিকল্পগুলি বিবেচনা নেওয়াঃ
কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রস্তাবিত হতে পারে:
- ইউটেরিন ইনসেমিনেশন (IUI): যেখানে শুক্রাণু সরাসরি স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।
- ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF): যেখানে একটি বা একাধিক ডিম্বাণু বাইরে নিষিক্ত করা হয় এবং পরে জরায়ুতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
- ডোনার সিমেন বা ডোনার ডিম্বাণু ব্যবহারঃ যদি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ায় গর্ভধারণ সম্ভব না হয়।
৫. সুস্থ জীবনযাপন ও স্বাস্থ্য পরামর্শঃ
স্বামী এবং স্ত্রীর উচিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা। এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
- পুষ্টিকর খাদ্যঃ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন তাজা ফল, সবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
- ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করা।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা মানসিক প্রশান্তির অন্যান্য উপায় অনুসরণ করা।
৬. দাম্পত্ব সম্পর্কের পুনর্নির্মাণে সময় দিতে হবেঃ
বন্ধ্যত্ব একটি সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের মৌলিকতা বজায় রাখতে কাজ করা এবং যৌথভাবে সমস্যার সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালানো। সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে একে অপরকে সময় দেওয়া, একসাথে চলা, এবং সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন।
৭. পরিবারের অন্যান্য বিকল্প সম্পর্কে ভাবতে হবেঃ
কিছু দম্পতি সন্তানের অভাব পূরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনার অন্যান্য বিকল্প যেমন দত্তক গ্রহণের চিন্তা করেন। এটি একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবারের পরামর্শ ও প্রস্তুতি প্রয়োজন।
৮. আইনগত ও সামাজিক দিক বিবেচনা করাঃ
বিশেষ কিছু দেশে আইনগত দিক রয়েছে যা দত্তক গ্রহণ বা গর্ভভাড়া সম্পর্কিত। এই বিষয়ে স্থানীয় আইন ও নিয়মকানুনগুলি জানুন এবং প্রয়োজন হলে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন।
৯. স্বীকৃতি ও সমর্থনঃ
একটি সমর্থনমূলক সামাজিক পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধ্যত্ব নিয়ে সমাজে প্রচুর স্টিগমা বা কুসংস্কার থাকতে পারে, তাই বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সমর্থন পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই বিশেষ সময়ে স্বামীর অবশ্যই উচিৎ হলো স্ত্রীকে সর্বদা সাহজ যোগানো এবং সমর্থন দিয়ে যাওয়া।
১০. পুনরায় চেষ্টা এবং ধৈর্যঃ
বন্ধ্যত্বের সমস্যা সমাধানে সময় লাগতে পারে এবং একেক দম্পতির অভিজ্ঞতা একেক রকম হতে পারে। এই কষ্টকর সময়গুলিতেও স্বামী স্ত্রীর উভয়ের উচিৎ, ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা এবং অগ্রগতির প্রতি আশাবাদী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
স্বামী হিসেবে স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব মোকাবেলায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং সহানুভূতি দেখানো প্রয়োজন। মেডিক্যাল সহায়তা থেকে শুরু করে মানসিক সমর্থন এবং সামাজিক পন্থা সবকিছু মিলিয়ে একটি সুস্থ এবং সুখী জীবনের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত। সবশেষে, একে অপরকে ভালোবাসা এবং সম্মান দেওয়া অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, যা যেকোনো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
গর্ভবতী অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ।
সেক্স বৃদ্ধির খাবার তালিকা। শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে যেসব খাবারে
সফলতার গল্প
আপনি কি ঢাকার সেরা বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ খুঁজছেন? ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আইভিএফ ও বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ, যার ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ১০০টিরও বেশি সফল আইভিএফ সাফল্য রয়েছে।
গর্ভাবস্থা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের YouTube এবং Facebook পেজে ভিজিট করুন:
- YouTube: Infertility Solution by Dr. Rafiqul
- Facebook: Infertility Solution BD
সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা পেতে এবং আমাদের কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, এখানে ভিজিট করুন: Google Maps