নারীর বন্ধ্যাত্ব! শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ছলছল দুটি চাহনি। একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলতে মাতৃত্বের স্বাদ কে বোঝায়। কিন্তু একজন বন্ধ্যা নারী এই সম্মান এবং প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এমন সমস্যা বিরল নয়। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষিতে একজন বন্ধ্যা নারী যেন জিবন্ত এক লাশ। পরিবার তথা সমাজের প্রতিটি স্তরে তাকে কটুকথা শুনতে হয়। সামাজিক কুসংস্কার আর প্রাচীন গোরামি থেকে বের হতে না পারা সমাজ একজন বন্ধ্যা নারীকে অপায়া হিসেবেই চিহ্নিত করে।
বাংলাদেশের মতো একটি পিছিয়ে পরা উন্নয়নশীল দেশে নারীর বন্ধ্যাত্ব যেন একটি অভিশাপ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া বর্ননা মতে, সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর (নিয়মিত সহবাস করার পরেও) টানা এক বছর সময়কাল যদি কেউ সন্তান ধারনে সফল না হন তাহলে তাকে সন্তান ধারণে অক্ষম বা বন্ধ্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।
সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকা শর্তেও জরিপে দেখা যায়, প্রতি 100 জন সন্তান ধারনে অক্ষম ব্যাক্তির মত্যে প্রায় সমান 40 শতাংশ নারী এবং সমান সংখ্যক পুরুষ থাকে। আর 10 ভাগ ক্ষেত্রে উভয়েরই সমস্যা থেকে থাকে। বাকি 10 শতাংশ নির্নয় করা সম্ভবপর হয়না।
নারী বা পুরুষ যে ই শারিরীক সমস্যায় বন্ধ্যাত্ব জনিত অক্ষমতায় ভুগুক না কেন সাধারনত পারিবারিক ভাবে নারী বা স্ত্রী ই সকল ক্ষেত্রে হেনস্তার স্বীকার হয়ে থাকে।
নারী বা পুরুষ উভয়েই বন্ধ্যাত্বে স্বীকার হয়ে থাকতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, একজন নারী বন্ধ্যাত্ব জনিত সমস্যায় ভুগলে পরিবারের সর্বপ্রথম উচিৎ তাকে মানসিক ভাবে সমর্থন যোগানো। মানষিক সাপোর্ট পেলে শতকরা 50% নারী বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান ধারনে সক্ষম হয়ে থাকে।
বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগে বন্ধ্যাত্ব কোন অভিশাপ নয়। বরং এটি আর ৫ টি অন্য রোগের মতই স্বাভাবিক বিষয়।
বর্তমানে বিভিন্ন সার্জারি এবং নানাবিধ হরমোনাল থেরাপির মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় নারীর বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তবে জীবন ধারায় গঠনমুলক পরিবর্তন নারীর বন্ধ্যাত্বের ভাল প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
আমাদের উচিৎ কুসংস্কার এবং প্রাচীন গোড়ামি থেকে বের হয়ে এসে নারীকে যথেষ্ঠ সমর্থন যোগানো এবং সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
©2024.Dr. Md Rafiqul Islam Bhuiyan. All Rights Reserved.