মানুষ তথা প্রতিটি প্রানীর প্রকৃতিগত ভাবে বংশ বৃদ্ধির জন্য শারীরিক সম্পর্ক একটি অবিচ্ছেদ্য নিয়ামক। নারী ও পুরুষের জৈবিক মিলনের মাধ্যমেই সংসারে আসে পরম ভালবাসার সন্তান। তবে এটা ভেবে ভুল করা যাবেনা যে, শুধু সন্তান ধারনের জন্যই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়, বরং একজন মানুষের মৌলিক সকল চাহিদার মতোই শারীরিক চাহিদাও সমান গুরুত্বপুর্ন। শারীরিক মিলন যেমন শারীরিক ভাবে আপনাকে সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে ঠিক তেমনি মানসিক ভাবে মনকে প্রফুল্ল রাখতে দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। সব মানুষের যৌন ক্ষমতা এক রকম নয়। নারী পুরুষের উভয়ের মধ্যেই যৌন দুর্বলতা আসতে পারে। কিছু কিছু কাজ এমন রয়েছে যা করার ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায় আবার কিছু কিছু কাজ রয়েছে যার মাধ্যমে নারী পুরুষ উভয়েরই যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যৌন ক্ষমতাকে ত্বরান্নিত করতে হলে, বেশ কিছু উপায় বিদ্যমান রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পুষ্টিকর খাবার, কার্যকর যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যায়াম, দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা ইত্যাদি।
আজকে আমরা আলোচনা করবো একটি কার্যকর ব্যায়াম নিয়ে যা, নারী পুরুষ উভয়ের জন্য অত্যান্ত উপকারি এবং যার মধ্যে বিশেষ করে, পুরুষের দ্রুত বীর্যপাত নামক সমস্যার অনেকাংশেই সমাধান নিহিত রয়েছে।
কার্যকর যে ব্যায়ামে যৌন সমস্যার অবসানঃ
অনেক বিশেষজ্ঞগন অনেক রকম ভাবে তাদের মতামত ব্যাক্ত করে থাকেন। নানা প্রান্ত থেকে নানান গবেষকগন বিভিন্ন ব্যায়ামের কথা বললেও, সকলেই একটি ব্যায়াম নিয়ে একমত যে, কেগেল এক্সারসাইজ বা কেগেল ব্যায়াম নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই ব্যাপক কার্যকরী। বিশেষত পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই এক্সারসাইজ অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে।
কেগেল এক্সারসাইজ কি?
কেগেল ব্যায়াম বলতে মুলত পেলভিক ফ্লোর পেশীগুলির সংকোচন-প্রসারণ সংক্রান্ত ব্যায়ামকে বোঝায়। কেগেল এক্সারসাইজ হচ্ছে একটি হ্যান্ডস্ট্যান্ডিং ব্যায়াম যা কোর স্ট্রেনথ আর ব্যালেন্স বৃদ্ধি করে। কেগেল এক্সারসাইজ হলো পেলভিক মসলে শক্তি বাড়ানোর জন্য করা একটি অনুশীলন। । কেগেল ব্যায়াম হল হাতের ওপর স্ট্যান্ড করার বা কোন ধরনের উপকরন ছাড়াই পেলভিক পেশীগুলির উপর নিয়ন্ত্রন আনার একপ্রকার অনুশীলন। কেগেল এক্সারসাইজ পেলভিক পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে যার ফলে, প্রস্রাব, মলত্যাগ এবং যৌনতার মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে থাকে।
কিভাবে কেগেল এক্সারসাইজ করা হয়?
কেগেল ব্যায়াম করার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হচ্ছে পেলভিক পেশি খুজে পাওয়া। পেলভিক পেশী বুঝতে পারা মানে আপনি অর্ধেক পথ পারি দিয়েছেন। এখন বাকি পথ পারি দিতে হবে নিয়মিত চর্চা করা ও মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে।
এই কেগেল এক্সারসাইজ করতে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি সহজেই বাড়িতে এই ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন। কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করবেন তা নিচে দেওয়া হলো –
- প্রথমে সমান স্থানে সোজা হয়ে পিঠের উপর চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- এখন কেগেল পেশী চিহ্নিত করুন। কেগেল পেশীগুলি মুলত পুরুষের লিঙ্গে প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
- দুই হাতের উপর ভর দিয়ে কোমর উপরে তোলার চেষ্টা করুন।
- স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন, কেগেল পেশীগুলিকে 5-6 সেকেন্ডের জন্য সংকুচিত করুন।
- তারপর পেশীগুলিকে কিছুটা বিশ্রাম দিন। এর পরে এই প্রক্রিয়াটি আবার পুনরাবৃত্তি করুন।
- মনে রাখবেন এই ব্যায়াম করার সময় কোমর, পেট ও উরুর পেশী ঢিলে রাখুন।
- আপনি এই গুরুত্বর্পুন এক্সারসাইজ বা যৌন শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম দিনে ৩ বার করতে পারেন।
কেগেলস কীভাবে শুরু করবেন তার একটি রোডম্যাপ আলোচনা করা হল কার্যকর যে ব্যায়ামে যৌন সমস্যার অবসানঃ
- প্রথমে, আপনার পেলভিক ফ্লোরের পেশীগুলি সনাক্ত করুন (উপরের পদক্ষেপগুলি ব্যবহার করে)।
- তিন সেকেন্ডের জন্য আপনার পেলভিক ফ্লোর পেশী শক্ত করে শুরু করুন, তারপর তিন সেকেন্ডের জন্য শিথিল করুন। এই এক সেট Kegel ।
- এটি ১০ বার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করুন। যদি ১০ খুব কঠিন মনে হয় তাহলে কিছুটা কমিয়ে দিন। একে সেট বলে।
- সকালে এক সেট এবং রাতে এক সেট করুন।
- যখন আপনি ইউসড টু হবেন, আস্তে আস্তে ব্যায়ামের সেটের সংখ্যাগুলি বাড়ানোর চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার কেগেলগুলিকে তিন সেকেন্ডের জন্য ধরে (সংকোচিত) রাখার এবং তিন সেকেন্ডের জন্য শিথিল করার পরিবর্তে, প্রতিটি পাঁচ সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন এবং শিথিল করুন।
কেগলের এক্সারসাইজ় যে কোন সমতল জায়গায় বসে বা শুয়ে দম ধরে রাখা ও ছাড়ার মাধ্যমে করা যায়। প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করার মতো করে পেলভিক মাসলগুলি শক্ত করে ধরে রাখতে হবে ও ছেড়ে দিতে হবে। আপনার মনে রাখবেন কেগেল একটি পরিক্ষিত ব্যায়াম যা পুরুষের অন্যান্য অনেক সমস্যার মতো যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যায়াম হিসেবে অতিশয় কার্যকর হয়ে থাকে।মুত্রথলি খালি রয়েছে, অবশ্যই এমন সময়ে এটি করতে হবে।
কেগেল এক্সারসাইজের উপকারিতাঃ
যাদের প্রস্রাবের সমস্যা আছে, যেমন প্রস্রাবের একটু পরই আবার বেগ পাওয়া, অল্প সময়ও প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারা, হাঁচি বা কাশির সময় প্রস্রাব বের হওয়া থেকে শুরু করে, বিবাহিতদের দ্রুত বীর্যপাত, লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা ইত্যাদির জন্য এটি উপকারী। এই ব্যায়ামটি পুরুষ মহিলা সবার জন্যই। ক্যাগেল এক্সারসাইজ দুই প্রকার- ক্লাসিক ক্যাগেল, পালস ক্যাগেল। দুই প্রকার নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রাথমিক ভাবে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির এই ব্যায়াম এর উপকারিতার মধ্যে, নিয়মিত ক্যাগেল ব্যায়াম করলে ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত প্রস্রাবের সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে। পুরুষের লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা সমাধান হতে প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দ্রুত বীর্যপাতের কার্যকর সামাধন আসতে হলে আপনার ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। ক্যাগেল একবার শুরু করলে নিয়মিত করে যেতে হবে। নাহলে ফলাফল পাবেন না। ব্যায়াম শুরু করার পুর্বে অবশ্যই সকল প্রকার পর্ণোগ্রাফি এবং হস্তমৈথুন থেকে নিজেকে মুক্ত করবেন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়াম যোনিকে শক্ত করে তোলে এবং প্রচণ্ড উত্তেজনার তীব্রতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট এই ব্যায়াম আমাদের শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে। কেগলের প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ এক্সারসাইজ়টি কোনও জায়গায় বসে বা শুয়ে দম ধরে রাখা ও ছাড়ার মাধ্যমেই করা যায়। প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করার মতো করে পেলভিক মাসলগুলি শক্ত করে ধরে রাখতে হবে ও ছেড়ে দিতে হবে। আপনার মুত্রাশয় খালি করে কেগেল এক্সারসাইজ শুরু করবেন।
অনেক সময় দেখা যায়, যাঁদের ওজন অত্যধিক বেশি, তাঁরা ওজন না কমিয়েই এই এক্সারসাইজ় শুরু করেন। যার ফলে আপনার কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোমরে কোনও চোট বা ব্যথা থাকলেও এই এক্সারসাইজ় করা উচিত নয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরে উল্লেখিত বিষয় বিবেচনা করে নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ আপনার যৌন সমস্যাকে বিদায় করে দিতে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে এবং আপনাকে দিবে অনাবিল সুখ।
যৌন সমস্যা এবং বন্ধ্যাত্ব নিয়ে যদি আপনি সমস্যায় পরেন তো অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন, বাংলাদেশের সেরা বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে বিষেশজ্ঞ ডাঃ রফিকুল ইসলাম ভূইয়ার সাথে। আপনার সাংসারিক জীবন হয়ে উঠুক সুখময়।