DR. MD RAFIQUL
ISLAM BHUIYAN

পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ ও সঠিক চিকিৎসা

পুরুষের শুক্রাণু সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ ও কার্যকরী চিকিৎসা

পুরুষের যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য শুক্রাণুর সংখ্যা বেশি হওয়া জরুরি। মেডিকেলের ভাষায়,যখন পুরুষদের দেহে বীর্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকে তাকে বলা হয় অ্যাজোস্পার্মিয়া।কোন কারনে যদি শুক্রাণুর কাউন্ট লো আসে তাহলে সেটা হলো ওলিগোস্পার্মিয়া। শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া মানে হলো একজন পুরুষের যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়া।তাই বিবাহিত দম্পতির সুখের মূলে রয়েছে যথাযথ যৌন মিলন তথা শুক্রণুর পরিমাণ বৃদ্ধি করা। আপনি কি শরীরে শুক্রাণু সংখ্যা বাড়াতে পারবেন? হ্যাঁ, আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে পারবেন। পাশাপাশি ঘরোয়া উপায়ে খাদ্য নির্বাচনে করে ও এই যাত্রায় বেঁচে যেতে পারেন!


প্রায়সময়ই নারীদের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে বেশ সমালোচিত হয় কিন্তু পুরুষের অক্ষমতা আড়ালেই রয়ে যায়। সাধারণত ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি শুক্রাণু ছাড়া একজন পুরুষ তার যৌনকর্ম সহজভাবে সম্পাদন করতে পারে না।যাদের শরীরে বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কম তারা যৌন উদ্দীপনার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে না। স্বভাবতই দম্পতি বাচ্চা লাভের আশায় বিয়েসাদী করেন। যখন সেই আশা নিরাশা হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই বিবাহিত দম্পতি হয়ে পড়ে বিপদগ্রস্ত এবং দুশ্চিন্তার শামিল। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই।বর্তমানে অনেক আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে সহজেই এসব বিপদ থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করছেন।এই অনুচ্ছেদে বলা হবে,কিভাবে আপনি সঠিক চিকিৎসা দিয়ে যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারবেন এবং শুক্রাণু সংখ্যা কমে গেলে সেটা কিভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।

পুরুষের শুক্রাণু কম হওয়ার কারণ

সাধারণত আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস আর পিটুইটারি গ্রন্থি শুক্রাণু উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে।তাছাড়া অন্ডকোষ থেকে শুক্রাণু তৈরি হতে প্রায় ৩ মাস সময় লাগে । এপিডিডিমিস থেকে সঞ্চিত শুক্রণু ইজাকুলেনের সময়ে সিমেনের সাথে মিশে নির্গত হয়।এই ধাপের মধ্যে যদি কোথাও ব্লকেজ তৈরি হয় তাহলে আপনার শুক্রাণু উৎপাদনে অসংগতি দেখা দিবে।তাছাড়া এর মধ্যে রয়েছে-

  • ১.শরীরের কোন সমস্যা দেখা দিলে অর্থাৎ গনোরিয়া, এইচআইভি এর মতো সমস্যা দেখা দিলে পুরুষের শুক্রাণু কমে যায়।তাছাড়া মানসিক চাপ, চিন্তা থেকে শুরু করে মানসিক অবস্থা খুব সহজেই শুক্রাণুর সংখ্যাকে প্রভাবিত করে।
  • ২.শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়। যখন শুক্তাণু প্রস্টেটে চলে আসে বা সার্জারি হলে ইনফেকশন থেকে এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের ও শুক্রাণু কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। 
  • ৩.বাহ্যিক কারনে প্রজননাঙ্গ গরম অনুভব হলে সাধারণত শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন ও বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। 
  • ৪.শরীরের যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে বাঁধা তৈরি করতে পারে আপনার মুড, স্মৃতি ও চেতনা যার জন্য আপনি সহজেই একঘেয়ে অনুভব করবেন এবং দম্পতির সাথে কলহ সৃষ্টি করবে।


সঠিক চিকিৎসা-


ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসাঃ

  • ১.অশ্বগন্ধা ব্যবহারঃ অশ্বগন্ধা আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।এটি বীর্যের ঘনত্ব এবং শুক্রাণুর গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। অনেকসময় ধারণা করা হয়, অশ্বগন্ধা বন্ধ্যাত্ব সহ যৌন কর্মহীনতায় ভালো কাজ করে বলে প্রমান পাওয়া গেছে। 
  • ২.মেথির বীজঃমেথির বীজে রয়েছে এমন উপাদান যা টেস্টেস্টেরনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে।মেথির বীজ সরাসরি উর্বতার সাথে সম্পৃক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
  • ৩. ধূমপান ত্যাগঃ ধূমপানে পুরুষের দেহে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।শুক্রাণু উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে এমন কার্যকরী উপাদান ধূমপানে ব্যাঘাত ঘটে। 
  • ৪.ব্যথার ঔষধ পরিহারঃ সাধারণত কিছু মেডিসিন আপনার দেহকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। শুক্রাণুর চাহিদাকে বেশ জোরালোভাবে প্রভাবিত করে। অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সহ দুশ্চিন্তা দূর করার মতো ওষুধ পরিহার করুন কারন এর জন্য আপনার প্রজননে সাইড এফেক্ট বেশি পড়বে।
  • ৫.শরীর চর্চা করাঃ নিয়মিত শরীর চর্চা করা সুস্থতার একটি অন্যতম উপায়।শরীরচর্চার মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন সহ হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখা যায়। পাশাপাশি আপনার শুক্রাণুর উৎপাদন ক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়ে যাবে বলে মনে করা হয়।
  • ৬. ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরিহারঃ সাধারণত ইলেকট্রম্যাগনেটিক আলো আপনার দেহে সরাসরি প্রবেশ করলে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায় এবং এর কার্যক্রম ব্যহত হয়।


অন্যান্য চিকিৎসাঃ


কম স্পার্ম কাউন্টের লক্ষন- সাধারণত বীর্যপাত হওয়া, মুখের বা শরীরের লোম কমে যাওয়া এবং যৌন ও প্রস্টেট সমস্যার ইতিহাস থেকে বোঝা যায় আপনার স্পার্ম কাউন্ট কত হবে এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে আন্দাজ করা যায়। 
বীর্য বিশ্লেষণ করা- এটি হলো এমন এক পরীক্ষা যার মাধ্যমে শুক্রাণুর কার্যকারিতা ও গননা করা যায়। জেনেটিক পরীক্ষা, টেস্টিকুলার বায়োপসি সহ অ্যান্টি স্পার্ম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা দিয়ে সহজে আপনার বীর্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন।

ART প্রজনন প্রযুক্তি – সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি হলো গর্ভধারণে সক্ষম একটি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।এর মধ্যে রয়েছে IVF।এটি হলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উর্বতার চিকিৎসা যার কারনে ডিম্বাশয়কে উদ্দীপনা করার পাশাপাশি ICSI এর মতো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। 

অনেকসময় দেখা যায়, চিকিৎসকরা ভায়াগ্রা সহ বিভিন্ন ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।তবে সঠিক চিকিৎসা না নিলে আপনার প্রজনন ক্ষমতা আরো দুর্বল হয়ে পড়বে,দেখা দিবে শরীরের জটিল সমস্যা। দীর্ঘদিন এসব ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।কাউন্সিলিং সবচেয়ে নিরাপদ থেরাপি হিসাবে বর্তমানে অনেক কাউন্সিলর মনে করেন।কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার সমস্যার গাইডলাইন মেনে কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন তা জানতে পারবেন। তাছাড়া মেডিটেশন এর সাহায্যে আপনি দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে পারবেন।

পরিশেষে বলা যায় – একটি আদর্শ পরিবার গঠন হওয়ার প্রথম শর্ত হলো সুখী দাম্পত্য জীবন। এই জীবনে নারী বা পুরুষের মধ্যে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কমে যাওয়া এবং বীর্যে শুক্রাণু হ্রাস পাওয়া যৌন চাহিদার অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে।নারীদের বন্ধ্যাত্ব যেমন সমাজে কলংকিত ঠিক পুরুষের পর্যাপ্ত পরিমানে শুক্রাণু উৎপাদন না হওয়া বা অর্গাজম লাভ না করা ও অন্যতম কারন হলো যৌন উদ্দীপনায় ব্যাঘাত ঘটা।সঠিক চিকিৎসা দিয়ে আপনি সহজেই পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন সহ শুক্রাণু সংখ্যা বাড়াতে পারবেন। তাছাড়া আশাবাদী যে, আপনি এই পদ্ধিতেতে একটি সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করবেন।