গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন সময়। অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য সব বিষয়ে অনেক ভেবেচিন্তে পা বাড়ান একজন গর্ভবতী মা। সেজন্য তারা মেনে চলেন নানা ধরনের নিয়মকানুন। সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় সহবাস করা যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অনেক পুরুষের মধ্যেই নানাবিধ অসুম্পর্ন ধারনা রয়েছে। ৯ মাস ধরে এই দোটানায় অনেক পুরুষেরই নানাবিধ স্ট্রেস হয়, আবার কেউ কেউ অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। নারীরাও অনেক সময় শূন্যতা বোধ করেন। যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ছন্দপতন ঘটে নানা সময়। যার আঁচ এসে পড়ে অনাগত সন্তানের উপর এখন প্রশ্ন হলো গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে কিনা? গেলে কত দিন পর্যন্ত করা যাবে?
চিকিৎসকদের মতে, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক মিলন করা নিরাপদ। তবে তার জন্য বিশেষ কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকদের নানাবিধ গবেষনা মতে, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর শারীরিক মিলন হলে দুজনের সম্পর্কের রসায়ন আরও জোরালো হয়। বৈবাহিক জীবন আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
নারীর গর্ভধারন ও সহবাস নিয়ে আমেরিকার এক গোষ্ঠি গবেষকরা মনে করেন, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হলে সম্পর্ক আরো গভীর হয়। দুজনের বন্ধন আরও ঘনিষ্ঠ হয়। শুধু তাই নয়, এতে স্ট্রেস কমে। কোনো জটিল সমস্যা না থাকলে ৯ মাস পর্যন্ত সবসময়ই স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক মিলন নিরাপদ।
এছাড়া গর্ভাবস্থার নির্দিষ্ট কিছু সময়ে বিশেষ সতর্কতা মেনে চললে সহবাসে কোনো সমস্যা নেই ।প্রথম তিন মাস আর শেষ দুই মাস কিছুটা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। বিশেষ করে জটিলতা থাকলে এটা বলা হয়। তবে এসময়েও বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে সহবাস করা যায়।
গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময়সীমা সাধারণভাবে তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়:
১. প্রথম ত্রৈমাসিক (০-১৩ সপ্তাহ)
এই সময়ে গর্ভাবস্থার হার্টবিট ও প্লেসেন্টার তৈরি হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় থাকে। কিছু নারীর এই সময়ে ক্লান্তি, মর্নিং সিকনেস বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সহবাস করা উচিত, কিন্তু সাধারণভাবে এটি নিরাপদ। হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিবর্তনের কারণে এ সময় মায়েদের সহবাস অনুভুতি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এর সাথে সাথে গর্ভধারণের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ক্লান্ত লাগা, বমি বমি ভাব, স্তনে ব্যাথা এবং ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়ার কারণে শারীরিক ভাবে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা নাও করতে পারে।
২. দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৪-২৬ সপ্তাহ)
এই পর্যায়ে গর্ভাবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল থাকে এবং নারীর শরীর কিছুটা সুস্থ থাকে। সহবাস সাধারণভাবে নিরাপদ, তবে আবারও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করা উচিত। এ সময় প্রথম ট্রাইমেস্টারের সমস্যাগুলো চলে যায় বা আপনি সমস্যাগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যান। এ সময় শারীরিক মিলনে অসুবিধা হওয়ার মত পেটও বড় হয়না। এখন আগের চাইতে বেশী শারীরিক মিলনের ইচ্ছে জাগতে পারে।
৩. তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭ সপ্তাহ থেকে জন্ম পর্যন্ত)
এই সময়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি কমে যায়, কিন্তু কিছু শারীরিক পরিবর্তন ও আরামদায়ক অবস্থান বিবেচনায় রাখতে হবে। সহবাসের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এবং কোনও অস্বস্তি বা সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে এসে মিলনের ইচ্ছা আবার কমে যেতে পারে। এ সময় পেট অনেক বড় হয়ে যায়, যার ফলে কিছু পজিশনে মিলিত হওয়া অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে। এছারাও এ সময় প্রসব এবং বাচ্চা জন্মদান নিয়ে মায়েরা বেশী চিন্তিত থাকেন।মনে রাখবেন গর্ভাবস্থায় সহবাস না করেও একে অন্যকে সুখী রাখতে পারেন।
উল্লেখযোগ্য যে, সব গর্ভাবস্থা ভিন্ন এবং কিছু বিশেষ অবস্থায় (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাশয়ের সমস্যা, ভ্রূণ সংক্রমণ) সহবাসের পরামর্শ আলাদা হতে পারে। সুতরাং, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বদা উত্তম।
অনেক নারীর গর্ভধারনের প্রাথমিক ধাপে (প্রথম তিনমাস সময়ে) যদি অল্প পরিমান রক্তক্ষরন হয় তাহলে ডাক্তার বলেন শেষ বার রক্তক্ষরনের পর কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময়কাল মিলন/অন্যকোন ভাবে সহবাস তৃপ্তি থেকে বিরত থাকতে।
শেষকথাঃ
সহবাসকে আনন্দময় করতে হলে যেমন বিভিন্ন কলাকৌশল আয়ত্ত করা দরকার তেমনি গর্ভাবস্থায় আনন্দময় সহবাস করতে হলেও কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়। সাধারনত এটা খুব কঠিন কিছু নয় তবে মনে রাখা উচিৎ যে, অকাল প্রসবের ঝুঁকি থাকলে গর্ভাবস্থায় সঙ্গম এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় সহবাসের সময় যদি কোনও অস্বাভাবিক ব্যথা হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে। নানাবিধ চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এর নিকট হতে।
অন্য কোনও কারণেও যদি সহবাসের পর রক্তপাত হয় তাহলেও যৌনতা এড়িয়ে যেতে হবে। দেখিয়ে নিতে হবে প্রসূতি বা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে। যদি সঙ্গীর শরীরে এসটিআই থাকে তাহলেও যৌনতা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ শিশুর শরীরেও সেই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।
আপনার সংসার হোক সুন্দর সহবাস হোক এবং প্রবল চাওয়া পাওয়ার সমন্বয়ে কাঙ্খিত মাতৃত্ব আনন্দময় নিরাপদ। সকল দম্পতির জন্য শুভকামনা থাকবে সবসময়।
চূড়ান্ত পরামর্শ:
গর্ভাবস্থায় সহবাস সম্পর্কে সবসময় সতর্কতা ও সচেতনতা মেনে চলতে হবে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব রয়েছে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের YouTube এবং Facebook পেজে ভিজিট করুন:
- YouTube: Infertility Solution by Dr. Rafiqul
- Facebook: Infertility Solution BD
সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা পেতে এবং আমাদের কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, এখানে ভিজিট করুন: Google Maps
যুক্ত থাকুন এবং সুস্থ থাকুন!
সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের সাথে!