স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার মানুষের নয় শুধু সকল প্রানীর ই বেঁচে থাকতে হলে খাবার প্রয়োজন। পর্যাপ্ত না হলেও নূন্যতম প্রয়োাজনীয় খাবার গ্রহন করতেই হবে। আর তা না পারলে প্রানীর দেহে প্রাণ থাকবে না। বয়স, অবস্থা ভেদে খাবারের তারতম্য খুবই স্বাভাবিক। শিশুদের খাবার একরকম হয়ে থাকে আবার বৃদ্ধ মানুষের খাবার হয় আরেক রকম। লিঙ্গ ভেদে ছেলে মেয়েদের খাবারেও ভারসাম্য করতে হয়। মায়েদের মধ্যে গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার খুবেই ফলপ্রসু হয়ে থাকলেও স্তন্যদানের সময় আবার ভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহন করার পরামর্শ দেয় চিকিৎসকরা। স্বাভাবিক ভাবেই বুকের দুধের উৎপাদন পক্রিয়া স্বাভাবিকিকরনের জন্য স্তন্যদানকারী মায়েদের খাবারে বৈচিত্র আনা হয়। ঠিক তেমনি ভাবে কিছু খাবার আছে যা স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার বলে বিবেচিত। এর মূল কারন এসব খাবারে মায়েদের শরিরে স্বাভাবিক দুধের প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে।
নবজাতকের জন্য নিতে হলে মায়ের খাবারের দিক গভীর ভাবে বিবেচনায় আনা দরকার। আমরা সাধারনত স্তন্যদাকারী মায়ের প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে কথা বলি কিন্তু শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার নিয়ে আলোচনা করা হয়না।
গত আর্টিকেলে আমি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার। নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে আমরা নিবন্ধটি সাজিয়েছি সম্পুর্নই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার নিয়ে।
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনি যা জানতে পারবেনঃ
- স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার গুলি কি কি?
- এসব খাবার খেলে মা ও সন্তান কি ধরনের সমস্যায় পরতে পারে?
- স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শঃ
স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবারঃ যে সমস্ত খাবার খাওয়া একজন স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য ক্ষতিকর এবং একই সাথে দুগ্ধপানকারী শিশুর জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু খাবার আছে যা ক্ষতিকর নয় কিন্তু নতুন স্তন্যদানকারী মায়ের বুকের দুধের স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে বা বুকের দুধ কমিয়ে দেয় সেই ধরনের খাবারকে বোঝায়।
স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার গুলি কি কি?
মদ্যপান ও ধূমপানঃ
শিশু সন্তানকে দুধ পান করান এমন মায়ের এই সময়ে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকতেই হবে। কারণ, মদ্যপান করলে মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ কমে যায়। অনেকের ধারনা ৯ মাসের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে এখন উৎসব পালনের জন্য মায়ের বিনোদনের জন্য শিশু জন্মের পর সপ্তাহে এক পেগ মদ্যপান করা যেতেই পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের হেল্থ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের অধ্যাপক ডাক্তার জ্যাক নিউম্যানের মতে, স্তন্যদানকারী মা মদ্যপান করলে শিশুর স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বো সন্তানের চাহিদা অনুযায়ী দুধ উৎপন্ন না হলে, কখনওই শিশুর পেট ভর্তি হবে না। সারা ক্ষণ তার মেজাজ বিগড়ে থাকবে। এ ছাড়া, নিকোটিন আছে এমন কোনও জিনিসই খাবেন না। প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে ধূমপানের প্রভাব পড়বে আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যে।
ক্যাফেইনঃ
আমরা জানি ক্যাফেইন শিশুর জন্য ক্ষতিকর। অল্প পরিমানে চা কফি পান করা যেতে পারে কিন্তু দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা কফি পান করলে মায়ের শরীর থেকে দুধের মাধ্যমে তা শিশুর শরীরেও ক্যাফেইন ছড়িয়ে পরবে। শিশুর শরীরে ক্যাফেইনের প্রভাব মারাত্বক হতে পারে কেননা তার স্বাভাবিক ঘুমের বেশ তারতম্য দেখা যেতে পারে যা শরীর গঠনে ভারসাম্য নষ্ট করে দিবে। অনেক গবেষকগণই স্তন্যদানকারী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার বিবেচনায় ক্যাফেইনকে এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
টকজাতীয় ফলঃ
সাধারণত টকজাতীয় ফল নতুন মায়ের শরীরের জন্য ভালো, কেননা, এতে প্রচুর ভিটামিন সি’ থাকে তবে কিছু কিছু শিশু ভিটামিন সি’ সহ্য করতে পারে না। ফলাফল শিশুদের ডায়রিয়া দেখা দেয়। অর্থাৎ ‘ভিটামিন সি-র অতিরিক্ততায় শিশুদের অ্যালার্জি থাকা অমুলক নয়। তখন মায়ের করণীয় হলো টক ফল খাওয়া বন্ধ করা। খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এমন ফল স্তন্যদায়ী মায়েদের না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীর গেলে শিশুর মধ্যে বমি করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। টকজাতীয় ফল শিশুর জিআই ট্র্যাক্টে সমস্যা তারি করতে পারে।
এসব খাবার খেলে মা ও সন্তান কি ধরনের সমস্যায় পরতে পারেঃ
আলোচনা থেকে নিশ্চয় স্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন যে, উপরের খাবার গুলি স্তন্যদানকারী মা গ্রহন করলে তা নবজাতকের মায়ের নিজের ও সন্তানের জন্য কতটা ক্ষতির কারন হতে পারে।
প্রথমত মা অসুস্থ হতে পারে যার প্রভাবে সন্তান অসুস্থ হবে।
আবার মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যেতে পারে যার ফলে সন্তান সঠিক মাত্রায় দুধ থেকে বঞ্চিত হবে।
আবার কিছু কিছু খাবারের প্রভাবে মা ও নবজাতকের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পরতে পারে।
স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শঃ
সন্তানের বয়স ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ ছাড়া একটি শিশুর আর কিছুই খাওয়া উচিত নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে মায়ের তরফ থেকে একটি শিশু যে উপহার পায় তার মধ্যে সেরা হল স্তন্যপান। জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস স্তন্যপান করে একটি শিশু যে পুষ্টি পাবে, তা তাকে সারা জীবন নানা অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করবে। পুষ্টিবিদগন সর্বদাই বলে থাকেন, মায়ের দুধ হলো নবজাতকের জন্য সবচেয়ে উপকারী খাবার। একবার ভাবুন যদি আপনার সন্তান মায়ের দুধের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয় তবে কতটা পুষ্টি থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই নিয়ম মেনে সঠিক খাদ্য গ্রহন করুন এবং ক্ষতিকর খাবার থেকে স্তন্যদানকারী মা কে বিরত রাখুন। সুস্থ্য মা সুস্থ ও সুন্দর শিশু।