মানুষের বংশ বৃদ্ধি তথা সন্তান ধারনের প্রাকৃতিক উপায় হলো স্বামী স্ত্রীর সহবাস। সহবাসের ফলে স্বামীর বীর্য তথা শুক্রাণু স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করে ডিম্বানুর সাথে মিলিত হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে গর্ভধারন হয় এবং সন্তান প্রসব হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে সন্তান জন্মদানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন উপাদান হলো শুক্রাণু। পুরুষের শরীরে যদি শুক্রাণুর পরিমান আশংকাজনক ভাবে কমে যায় তখন সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময়েই নানাবিধ অসুস্থতা এবং সমস্যার কারনে পুরুষের দেহের শুক্রাণুর পরিমান কমে যায়। আবার পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায় হিসেবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ গণ বিভিন্ন ধরনের পাথেয় নির্ধারন করে দেন।
আজকে আমরা মুলত আলোচনা করবো শুক্রাণু বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায় সমুহ নিয়ে। শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম সেরা উপায় হলো সঠিক খাবার গ্রহন এবং জীবনযাত্রায় অমুলক পরিবর্তন। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহন করে। আবার সকল খাবার এক ধরনের উপকারে আসে না। কিছু খাবার এমন রয়েছে যা গ্রহনের ফলে আপনি যৌন শক্তিতে যেমন বলিয়ান হবেন ঠিক তেমনি আপনার দেহের শুক্রাণুর পরিমান বৃদ্ধি পাবে।
যে খাবারে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়েঃ
অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যা গ্রহন করলে একজন পুরুষের সহবাসের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং দেহের শুক্রাণুর পরিমান বৃদ্ধি পায়। এসকল খাদ্য যেমন সহজলভ্য তেমনি দামেও তুলনামুক সুলভ।
১। আনারঃ
আনারকে শুধুমাত্র একটি ফল হিসেবে বিবেচনা করা ভুল হবে। এর মধ্যে যে সকল পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা এক কথায় অনন্য। আনার ফলের মধ্যে রয়েছে যৌন ক্ষমতা বর্ধক বিভিন্ন গুণাগুন। আনারের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গবেষকদের মতে, আনার টেসটোসটেরন ও শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে উপকারী।
যুক্তরাজ্য ভিক্তিক একটি গবেষনা অনুযায়ী, কিছু মানুষকে আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন আনারের রস খাওয়ানো হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, তাদের শুক্রাণুর গুণগত মান পুর্বের তুলনায় বহুলাংশে বেড়ে যায়। শুধু তাই নয় পুরুষের বন্ধ্যাত্ব নামক সমস্যার বিষয়েও ডাক্তারগণ আনার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
২। ডিমঃ
আমারা সকলেই জানি খাদ্য হিসেবে ডিম কতটা গুরুত্বপুর্ন এবং আদর্শ। ডিমের মধ্যে ভিটামিন ও অন্যান্ন উপাদানের সংমিশ্রন রয়েছে যা পুরুষের সেক্স বৃদ্ধি এবং শুক্রাণু বৃদ্ধিতে সহায়ক। বীর্য ঘন এবং স্বাভাবিকিকরনেও ডিম ভূমিকা রাখে।
শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম। ডিমে রয়েছে ভিটামিন ই এবংপুষ্টিকর প্রোটিন। এসব উপকরন শুক্রাণুর সক্রিয়তায় সাহায্য করে।
৩। কুমড়ো বীজ
আমরা আগেই বিভিন্ন আলোচনায় বলেছি বীজ জাতীয় খাবারের উপকারিতা কত। বীজ জাতীয় খাবারের মধ্যে কুমড়োর বীজ অন্যতম একটু সেক্স ফুড হিসেবে বিবেচিত। কুমড়ো বীজের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড ও ফাইটোসটেরল। এ খাবারটি পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায়, কুমড়ো বীজে থাকা উপাদান টেসটোসটেরোন হরমোনের সিরামের মাত্রা বাড়ায়। এ ছাড়া শুক্রাণুর মাত্রা, জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়াতে কুমড়ো বীজের কাজ অতুলনীয়।
৪। কলা
শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। অল্প দামে সেরা ফল হিসেবে কলার ভূমিকা ও গুরুত্ব যুগ যুগ ধরে। কলাতে আছে ভিটামিন বি, সি এবং ম্যাগনেসিয়াম যা শুক্রাণুর গতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে। কলার মধ্যে আবার ব্রোমেলাইন নামক একটা বিরল উৎসেচকও থাকে যা শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গতিশীলতা বাড়াতে ও সেক্স হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া, কলা যৌন হরমোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কলা সহজলভ্য ফল যা আপনার অন্তত প্রতিদিন দুই পিস করে খাওয়া চাই ই চাই।
৫। ডার্ক চকলেট
বিজ্ঞানিদের মতে, শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে সেরা খাদ্যটি হল ডার্ক চকোলেট। কেন? কারন জানতে হলে বুঝতে হবে এর খাদ্য উপাদান কি কি। ডার্ক চকলেট কোকো বিনস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। আবার ডার্ক চকোলেটের মধ্যে থাকে এল আরজিনিন নামক একটি উৎসেচক যা শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ডার্ক চকলেট অনেক সময় হারানো যৌবন খুজে ফেরা পুরুষদের জন্যে ভায়াগ্রার মতো কাজ করে। সেক্স শুরুর আগে একটি ডার্ক চকলেট খেয়ে নিন। ফলাফল নিজেই দেখুন।
৬। রসুন
প্রতিদিনের খাদ্যে আমরা নানা ভাবে রসুন খেয়ে থাকি। তরকারি, ভাল কোন বিশেষ আইটেম বা ভর্তা, রসুন কিন্তু চাই ই চাই। রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি শুক্রাণু উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রসুন যৌন অঙ্গাণুগুলিতে রক্ত অবাধে প্রবাহিত হওয়া এবং ড্যামেজ হওয়া থেকে সেগুলোকে রক্ষা করে। পুষ্টিবিদদের ধারনা মতে, রসুনে সিলেনিয়াম নামে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসেচক পাওয়া যায় যা শুক্রাণুর গতিশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
সাধারনত শুক্রাণু সুস্থ্য স্বাভাবিক থাকা পুরুষের জন্য সন্তান জন্মদানে সক্ষমতার জন্য আবশ্যকীয়। আপনার অনাগত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিয়মিত উপরে উল্লেখিত খাদ্য সমুহ গ্রহন করুন। সুস্থ থাকুন এবং হাসিখুশি থাকুন।
তার পরেও যদি শুক্রাণুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় তবে বাংলাদেশের সেরা বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক চিকিৎসক ডাঃ মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম ভূইয়ার স্বরনাপন্য হতেই পারেন। আশা রাখতে পাবেন সঠিক পরামর্শ এবং নির্দেশনা পাবেন। সকলের জন্য সুভকামনা থাকলো। আপনাদের প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরামর্শ পেতে যে কোন সময় যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের সুস্থ্যতা কামনায় সর্বদা প্রস্তুত ইনশাআল্লাহ্।